এই আলোচনা শুধু তাদের জন্য যারা নবীর আনুগত্য করতে ও তার কথাকে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হিসেবে মানতে চান না অর্থাৎ হাদীসকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
Table of Contents
আল্লাহর আদেশ, রাসূল ﷺ এর কথা ও আদেশ মেনে নেওয়া
"হে নবী আপনার প্রতিপালকের শপথ, তারা কখনও ঈমানদার হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তারা আপনাকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক না করে এবং আপনার সিন্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোন অনীহা বা দুঃখ না থাকে এবং যে পর্যন্ত তারা আপনার বিচারকে সম্পূর্ণরূপে মনে প্রাণে মেনে নেয়৷"
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল-নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না। [সূরা হুজুরাত আয়াত ১-২]
“শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌছানো এবং তাঁর রিসালতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে-কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।” [সূরা জ্বীন আয়াত ২৩]
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”
হে নবী, যখন মুমিন নারীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বাইআত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তারা জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না। তখন তুমি তাদের বাইআত গ্রহণ কর এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা মুমতাহিনা আয়াত ১২]
“আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে ‘ফায়’ (বিনা যুদ্ধে পাওয়া সম্পদ) হিসেবে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও পথচারীদের, যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান শুধু তাদের মধ্যেই ঐশ্বৰ্য আবর্তন না করে। রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।”
নবী ﷺ কে অনুসরণ করা এবং তার আনুগত্য
কোরআনে আল্লাহ রাসূলকে অনুসরন করতে বলেছেন, কারন রাসূলের অনুসরন করা মানেই আল্লাহর অনুসরন করা কারন রাসূল আল্লাহর ইচ্ছাতেই সব কিছু করেন। যেমন কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন,
”বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার (রাসূল) অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।”” [সুরা আলে ইমরান আয়াত ৩১-৩২]
আল্লাহ আরো বলেন,
”যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি” [সূরা নিসা আয়াত ৮০]
আর তোমারর নিকটস্থ জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে সতর্ক কর। আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, ‘তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’। [সূরা শুরা আয়াত ২১৪-২১৬]
আল্লাহ তায়ালা আরেক আয়াতে বলেছেন,
“যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।” [সুরা আরাফ আয়াত ১৫৭-১৫৮]
‘আর আমার সামনে পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের যা রয়েছে তার সত্যায়নকারীরূপে এবং তোমাদের উপর যা হারাম করা হয়েছিল তার কিছু তোমাদের জন্য হালাল করতে এবং আমি তোমাদের নিকট এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে। অতএব, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আমার আনুগত্য কর’। [সূরা আলে ইমরান আয়াত ৫০]
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তাদেরকে অপদস্থ করা হবে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছিল তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। আর আমি নাযিল করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে অপমানজনক আযাব। [সূরা মুজাদালা আয়াত ৫]
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তারা চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা মুজাদালা আয়াত ২০]
এটি এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। [সূরা আনফাল আয়াত ১৩]
এটি এ জন্য যে, তারা সত্যিই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। [সূরা হাশর আয়াত ৪]
মুহাম্মদ ﷺ এর উপদেশ ও আদর্শ গ্রহনে কুরআনের তাগিত
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন তিনি রাসূল ﷺ কে ২টি জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন, অন্য রাসূলদের মত। সেগুলো কি কি? সেগুলো হল কোরআন ও হিকমাহ। এই বিষয়ে আল্লাহ কোরআনে বলেন,
‘আর তিনি তাকে (ঈসাকে) কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল শিক্ষা দেবেন’। [সূরা আলে-ইমরান আয়াত ৪৮]
আর তোমার উপর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না হত তবে তাদের মধ্য থেকে একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করার সংকল্প করেই ফেলেছিল! আর তারা নিজদের ছাড়া কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তারা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।[সূরা নিসা আয়াত ১১৩]
”আর তোমাদের(নবী স্ত্রীদের) ঘরে আল্লাহর যে, আয়াতসমূহ ও হিকমত পঠিত হয়- তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-আহযাব আয়াত ৩৪]
“তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।” [সুরা জুমুআ আয়াত ২]
আল্লাহ নবী ও রাসূলদেরকে ওহি দ্বারাই হিকমাত দান করেছেন,
এগুলো সেই হিকমতভুক্ত, যা তোমার রব তোমার নিকট ওহীরূপে পাঠিয়েছেন। আর তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য নির্ধারণ করো না, তাহলে তুমি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে নিন্দিত ও বিতাড়িত হয়ে। [সূরা ইসরা আয়াত ৩৯]
আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমরা ইহসানকারীদের পুরস্কৃত করি। [সূরা ইউসুফ আয়াত ২২]
সূরা বাকারা আয়াত ১২৭-১২৯ ও ১৫১; সূরা আলে ইমরান আয়াত ৭৯, ৮১, ১৬৪; সূরা নিসা আয়াত ৫৪; সূরা মায়েদা আয়াত ১১০; সূরা আন'আম আয়াত ৮৯; সূরা নাহাল আয়াত ১২৫; সূরা মরিয়ম আয়াত ১২; সূরা কাসাস আয়াত ১৪; তেও একই রকম কথা বলা হয়েছে। এইসব আয়াতে নবী ও রাসূলকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা, দান, নাজিল করা হয়েছে বলা হয়েছে, এমনকি তাদেরকে সেগুলো সাধারন মানুষকে শিক্ষা দিতে বলা হয়েছে। এই আয়াতগুলোতে ‘হিকমত’ মানে হলো সুন্নাহ বা রাসূল যা শিখিয়ছেন সেগুলো যা রাসূলকে আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন। হয়তো অনেকে বলতে পারে কোরআনেরই শিক্ষাকে হিকমত বলা হয়েছে, কিন্তু এটা যৌক্তিক মনে হয় না। কারন যদি এমনটাই হত তাহলে এত যায়গায় আলাদা আলাদা করে কিতাব ও হিকমাহ বলার কি প্রয়োজন ছিল? বার বার এই দুটো শিক্ষা দেওয়ার কথা কেন বলা হয়েছে আলাদা আলাদা করে? শুধু কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন বললেই হত! তাই নয় কি? এছাড়া আমাদের এটাও জানা রয়েছে ইউসূফ (আ) এর কাছে ওহি আসতো ঠিকই কিন্তু উনার উপর কোন কিতাব নাজিল হয় নি, এমন আরো অনেক নবীই ছিলেন এমন। সেহেতু হিকমাকে কিতাবের শিক্ষা বলা কোন পক্ষেই সম্ভব নয়।
রাসূল ﷺ কে আল্লাহ বিশ্বস্ত রাসূল হিসেবে, হিদায়াত, পথনির্দেশ, সত্যদ্বীনসহ প্রেরণ করেছিলেন। [সূরা সফ আয়াত ৯; সূরা ফাতাহ আয়াত ৮; সূরা শূআরা আয়াত ১২৫; সূরা তাওবাহ আয়াত ৩৩] আল্লাহ রাসূলকে সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, উপদেশদাতা, সাক্ষীরূপে ও রহমতসরূপ প্রেরন করেছেন। [সূরা সাবা আয়াত ২৮; সূরা ফুরকান আয়াত ৫৬; সূরা আম্বিয়া আয়াত ১০৭; সূরা গাসিয়া আয়াত ২১-২৪; সূরা ফাতাহ ৮-১০] এছাড়া আল্লাহ কেন মুহাম্মদ (সা) এর দেখানো পথে চলতে বলেছেন তা সম্পর্কে স্পষ্ট কারন দেখিয়ে কুরআনে বলেছেন,
আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। [সূরা কালাম আয়াত ৪]
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” [সুরা আহযাব, আয়াত ২১]
আর তোমরা জেনে রাখা যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন; তিনি যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরাই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং সেটাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের কাছে অপ্ৰিয়। তারাই তো সত্য পথপ্ৰাপ্ত। [সূরা আল হুজরাত আয়াত ৭]
”নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে, আমরা কতিপয়কে বিশ্বাস করি ও কতিপয়কে অবিশ্বাস করি এবং তারা এর মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করতে ইচ্ছা করে। তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমরা প্রস্তুত রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আর যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগনের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করেনি, অচিরেই তাদেরকে তিনি তাদের প্রতিদান দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা নিসা আয়াত ১৫০-১৫২]
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। [সূরা নিসা আয়াত ৫৯]
রাসূল দ্বীন বিষয়ে সব কিছু ওহি অনুসারেই করতেন
আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। [সূরা মায়েদাহ আয়াত ৪৮]
“আর তিনি (নবী মুহাম্মদ) মনগড়া কথা বলে না।, তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়। তাকে শিক্ষা দান করেছেন প্ৰচণ্ড শক্তিশালী (জিবরীল)”
“(বলুন) আমার (নবী ﷺ) প্রতি যা ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি।” [সূরা আন আম আয়াত ৫০; সূরা আহকাফ আয়াত ৯]
“আর আপনার রবের কাছ থেকে আপনার প্রতি যা ওহী হয় তার অনুসরণ করুন; নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।” [সূরা আহযাব আয়াত ২]
আর এভাবেই আমি কুরআনকে বিধানস্বরূপ আরবীতে নাযিল করেছি। তোমার নিকট জ্ঞান পৌঁছার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ ছাড়া তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষাকারী নেই। আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। আর কোন রাসূলের জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন নিয়ে আসবে। প্রতিটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রয়েছে লিপিবদ্ধ বিধান। [সূরা রাদ আয়াত ৩৭-৩৮]
নবীর জন্য সেটা (করতে) কোন সমস্যা নেই যা আল্লাহ বিধিসম্মত করেছেন তার জন্য। আগে যারা চলে গেছে তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর বিধান। আর আল্লাহর ফয়সালা সুনির্ধারিত, অবশ্যম্ভাবী। [সূরা আহযাব আয়াত ৩৮]
“তিনি যদি আমাদের নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতেন, তবে অবশ্যই আমরা তাকে পাকড়াও করতাম ডান হাত দিয়ে, তারপর অবশ্যই আমরা কেটে দিতাম তার হৃদপিণ্ডের শিরা, অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাঁকে রক্ষা করতে পারে।” [সূরা হাক্কাহ আয়াত ৪৪-৪৭]
বল, ‘আমি যদি আমার রবের অবাধ্য হই তবে আমি এক মহাদিবসের আযাবের আশঙ্কা করি। [সূরা যুমার আয়াত ১৩]
এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভাল যে মহানবীর সব কাজ ও কথাই কিন্তু ওহির উপর ভিত্তি করে নয়। এখানে বিশেষ করে দ্বীনি বিষয়কে বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ দ্বীনি বিষয়ে তিনি যা যা আদেশ করেছেন, নিজে করেছেন, সমর্থন করেছেন সবগুলোই ওহির উপর ভিত্তি করেই।
কোরআনের বাহিরেও রাসূল ﷺ এর কাছে ওহী আসত
“অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুন্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়।”
কোন মানুষের এ মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম, পর্দার আড়াল অথবা কোন দূত পাঠানো ছাড়া। তারপর আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি যা চান তাই ওহী প্রেরণ করেন। তিনি তো মহীয়ান, প্রজ্ঞাময়। অনুরূপভাবে (উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে) আমি তোমার কাছে আমার নির্দেশ থেকে ‘রূহ’কে ওহী যোগে প্রেরণ করেছি। তুমি জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? কিন্তু আমি একে আলো বানিয়েছি, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করি। আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও। [সূরা আশ-শূরা আয়াত ৫১-৫২]
“আর যখন নবী তার এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন; অতঃপর যখন সে (স্ত্রী) অন্যকে তা জানিয়ে দিল এবং আল্লাহ তার (নবীর) কাছে এটি প্রকাশ করে দিলেন, তখন নবী কিছুটা তার স্ত্রীকে অবহিত করল আর কিছু এড়িয়ে গেল। যখন সে তাকে বিষয়টি জানাল তখন সে (স্ত্রী) বলল, ‘আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’ সে (নবী) বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।”
“আর আপনি এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করছিলেন সেটাকে আমরা এ উদ্দেশ্যে কেবলায় পরিণত করেছিলাম যাতে প্রকাশ করে দিতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে এবং কে পিছনে ফিরে যায়?”
“তোমরা যে সব নতুন খেজুর গাছ কেটে ফেলছ অথবা সেগুলোকে তাদের মূলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ। তা তো ছিল আল্লাহর অনুমতিক্রমে এবং যাতে তিনি ফাসিকদের লাঞ্ছিত করতে পারেন।”
মহানবী ﷺ দ্বারা কোরআনের তাফসির
(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে। [সূরা আন-নাহাল আয়াত ৪৪]
আর আমি তো তাদের নিকট এমন কিতাব নিয়ে এসেছি, যা আমি জ্ঞানের ভিত্তিতে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তা হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ এমন জাতির জন্য, যারা ঈমান রাখে। [সূরা আরাফ আয়াত ৫২]
যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।” আরেক আয়াতে তিনি বলেন, কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, তারপর তার বর্ণনার দায়িত্ব নিশ্চিতভাবে আমাদেরই। [সূরা কিয়ামাহ আয়াত ১৮-১৯]
আর আমরা প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা ইবরাহিম আয়াত ৪]
আল্লাহ রাসূলকে বলেছেন আল্লাহর অনুগ্রহ সমূহ মানুষের কাছে বর্ণনা করতে -
আর তুমি তোমার রবের অনুগ্রহের কথা জানিয়ে দাও। [সূরা আদ-দুহা আয়াত ১১]
“তিনি যদি আমাদের নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতেন, তবে অবশ্যই আমরা তাকে পাকড়াও করতাম ডান হাত দিয়ে, তারপর অবশ্যই আমরা কেটে দিতাম তার হৃদপিণ্ডের শিরা, অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাঁকে রক্ষা করতে পারে।” [সূরা হাক্কাহ আয়াত ৪৪-৪৭]
“যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে বা তার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় যালিমরা সাফল্য লাভ করতে পারে না।” [সূরা আনআম, আয়াত ২১] [অনেকটা একই জাতীয় কথা আরো উল্লেখ আছে সূরা ইউনুস আয়াত ১৭, ৬৯; সূরা আন আম আয়াত ১৪৪; সূরা আনকাবুত আয়াত ৬৮; সূরা যুমার আয়াত ৩২]
আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি? [সূরা যুমার ৬০]
আর তোমাদের জিহবা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না। [সূরা নাহাল আয়াত ১১৬]
এটি এ কারণে যে, তারা (আহলে কিতাব) বলে, ‘উম্মীদের ব্যাপারে আমাদের উপর কোন পাপ নেই’। আর তারা জেনে-শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা বলে। [সূরা আলে ইমরান আয়াত ৭৫]