ইসলামে আনন্দ উদযাপনের, বিনোদনের বিধান কি? ইসলাম মানলে জীবন উপভোগ করা যায় না?

অনেক মুসলিম ভাইবোনেরা মনে করেন ইসলাম মানলে জীবন উপভোগ করা যায় না। কারন তারা যেটাই করে সেটাই হারাম। আসলে দোষটা ইসলামের না দোষ আপনাদের। আপনারা অনেকে আনন্দ মানে মনে করেন হারাম খাবার খাওয়া, নারী-পুরুষ একসাথে নাচগান করা, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়ে পার্টি করা, বাদ্যযন্ত্র সহ গান শোনা, পর্ণগ্রাফি দেখা, হারাম সিনেমা দেখা ইত্যাদি যা ইসলামে হারাম। বর্তমান যুগেত বিনোদন এখন হারম নির্ভর হয়ে পরেছে, মানুষ এখন নতুন যুগের নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্বারা প্রভাবিত। এক সময় কিন্তু এত প্রযুক্তি ছিল না, তখনও কিন্তু বিনোদনের অনেক উপায় ছিল, যা হালালও ছিল। আপনারা নিজের অন্তরটাকে অপবিত্র করে ফেলেছেন তাই ইসলামের বিধান গুলো আপনাদের কাছে ভালো লাগে না। ইসলামে জীবন উপভোগ করতে মানা করা হয় নি। শুধু কিছু শর্ত আছে সেগুলো মানলে যথেষ্ট। যেমন -

(1) ধর্মীয় জরুরি কর্তব্য পালন থেকে উদাসীন না করা (2) শরিয়তের মহৎ লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল রাখা (3) সতর আবৃত থাকা এবং যৌন সুড়সুড়িদায়ক না হওয়া (4) জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়া (5) হারাম উপার্জনমুক্ত হওয়া (6) প্রতিযোগিতার জয়-পরাজয়ে শত্রুতা-মিত্রতা সৃষ্টি না হওয়া (৭) হারাম বাদ্যযন্ত্র না থাকা (8) অশ্লিলতা ও হারাম বিষয় থেকে দুরে থাকা এবং অন্যের ক্ষতি না করা

ইসলামে আনন্দ উদযাপনের বিধান কি? ইসলাম মানলে জীবন উপভোগ করা যায় না? মুসলিমরা যদি একটু বুঝার চেষ্টা করত তাহলে আর মনে করত না যে ইসলাম মানলে জীবন উপভোগ করা যায় না। তাহলে চলুন দেখে আশি ইসলামে জীবনকে উপভোগ করা নিয়ে কি বলা হয়েছে।

Table of Contents

{tocify} $title={Table of Contents}

ভ্রমন করা 

ভ্রমন করতে মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনেই বলেছেন। আপনি পরিবারের সাথে, বন্ধুবান্ধবের সাথে, আত্মীয়দের সাথে ঘুরতে যেতে পারেন। কিন্তু মেয়ে হলে অন্তত একজন মাহরাম সাথে থাকতে হবে ও মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া পরপুরুষ কোন নারীর সাথে দেখা করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ এর হাদিস মতে কোন পুরুষ যেন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে যতক্ষণ তার সাথে তার মাহরাম না থাকে এবং কোন মহিলা যেন ৩ দিনের সফর না করে যতক্ষণ না তার কোন মাহরাম বা নিজের স্বামী তার সাথে না থাকে।” [বুখারী ১৮৬২, ৩০০৬, ৫২৩৩, মুসলিম ১৩৩৮, ১৩৪০, ১৩৪১]

বেশ কয়েকজন ততকালিন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারগণ বলেছেন, “এখানে মাহরাম শর্ত নয়, বরং মহিলার নিরাপত্তাই শর্ত” কারন সহিহ কিছু হাদিস দ্বারা প্রমান পাওয়া যায় যে মাহরাম ছাড়াও নারীরা সফর করত বা মাহরাম নয় কিন্তু বিশ্বস্ত এমন পুরুষদের সাথেও আমাদের নবীর সময় অনেক নারী সফর করেছেন তাতে মহানবীর সম্মতিও ছিল। কিন্তু তারপরও মেজরিটি স্কলাররা বলেছেন মাহরাম থাকতেই হবে কারন মাহরাম থাকতে হবে এই মতের পক্ষে দলিল বেশি ও শক্তিশালি। এখানে সফর ৩ দিন বা তরচেয়ে বেশি হতে হবে ও ৪৮ মাইল (৭৭ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে হতে হবে।

১. তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ [সুরা আনকাবুত, আয়াত ২০]

২. বলুন, তোমরা যমীনে পরিভ্রমণ কর, তারপর দেখ, যারা মিথ্যারোপ করেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছিল! [সুরা আনআম, আয়াত ১১]

৩. মহানবী প্রতি সফরে বের হওয়ার সময় নীজের স্ত্রীদের মধ্যে যে কোন একজনকে (লটারি করে) সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। [বুখারী হা/২৫৯৩; মুসলিম হা/২৭৭০; মিশকাত হা/৩২৩২]

দুষ্টুমি বা হাস্যরস করা ও কৌতুক করা

আমাদের নবী অনেক হাশিখুশি মানুষ ছিলেন। তিনি তার সাহাবি ও স্ত্রীদের আনন্দ ও দুষ্টুমি করতেন। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে দেখা যায় তিনি রসিকতা করছেন বা দুষ্টুমি করছেন কারো সাথে। তার মধ্যে অল্প কিছু প্রমান উল্লেখ করলাম।

১. আমাদের প্রিয় নবী হাজারো দুঃখ-কষ্টেও হাস্যরস ও কৌতুক করেছেন। একদা নবীজি কয়েকজন সাহাবিসহ খেজুর খাচ্ছিলেন। প্রত্যেকে খেজুরের বিচি যাঁর যাঁর সামনে রাখছিলেন। নবীজি তাঁর খেজুরের বিচি হজরত আলী (রা) এর সামনে (তাঁর খেজুরের বিচির সঙ্গে) রাখতে লাগলেন। খেজুর খাওয়া শেষ হলে দেখা গেল, সবার সামনে প্রায় সমপরিমাণ খেজুরের বিচি; কিন্তু হজরত আলী (রা) এর সামনে দ্বিগুণ খেজুরের বিচি এবং নবীজি এর সামনে কোনো বিচিই নেই। এবার নবীজি বললেন, আলী! তুমি তো দ্বিগুণ খেজুর খেয়েছ। হজরত আলী (রা) সপ্রতিভ বললেন, আমি হয়তো খেজুর বেশি খেয়েছি; কিন্তু খেজুরের বিচি খাইনি; আপনি তো খেজুরের বিচিসহই খেয়ে ফেলেছেন। [নবী ﷺ এর জীবনী]

২. নবীজি নিজেও অত্যন্ত সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর অধিকারী ছিলেন। সাহাবিরা বলতেন, আমরা রাসুল -এর চেয়ে হাসিখুশি আর কাউকে দেখিনি। [তিরমিজি, হাদিস ৩৬৪১] মহানবী মৃদু হাস্য করতেন। কখনোই অট্টহাস্য করতেন না। সদা প্রফুল্ল থাকতেন। কখনোই গোমড়ামুখো থাকতেন না। তবে দুশ্চিন্তায় পড়লে তার ছাপ চেহারায় পড়ত এবং তখন তিনি ছালাতে রত হ’তেন। [আবুদাঊদ হা/১৩১৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০৩; মিশকাত হা/১৩২৫]

৩. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম মহানবী -কে রসিকতা করতে দেখে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের সঙ্গে হাসি-তামাশার কথাও বলেন! তিনি বলেন, তবে হ্যাঁ, আমি কোনো অসত্য ও প্রকৃত ঘটনার বিপরীত কিছু বলি না। [তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪১৬]

৪. প্রিয়নবী প্রায় সময় বিভিন্ন সাহাবিকে রসিকতা করে তাদের উপনাম দিতেন। যেমন -  হজরত আলী (রা) একটি চাদর ঘায়ে জড়িয়ে এমনভাবে শুয়ে ছিলেন যে তাঁর অর্ধেক দেহ মসজিদে আর অর্ধেক মাটিতে। তখন তিনি কৌতুক করে বলেন, উঠো! হে আবু তোরাব (মাটির পিতা)! এর পর থেকে হজরত আলী (রা.)-এর উপনাম হয়ে যায় আবু তোরাব। [বুখারি] মহানবী একদা হজরত আবদুর রহমান (রা)-এর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান যে তাঁর কোলে বিড়ালের বাচ্চা, তখন তিনি রসিকতা করে বলেন—হে আবু হুরায়রা (বিড়ালছানার পিতা) হজরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাসুল তাঁকে রসিকতা করে বলেছেন, হে দুই কানওয়ালা! তাঁর কর্ণদ্বয় তুলনামূলক বড় ছিল অথবা তিনি কানে অধিক শুনতেন বলে এ উপাধিতে ভূষিত করেন। [তিরমিজি]

৫. জাহের ছিলেন কৃষ্ণকায় ব্যক্তি। একদিন তিনি মদিনায় প্রামের জিনিসপত্র বিক্রি করতেছিলেন, তখন মহানবী পেছন দিক দিয়ে এসে তাঁকে জাপটে ধরেন। জাহের রাসুল -কে দেখতে না পেয়ে বললেন—তুমি কে? আমাকে ছেড়ে দাও। জাহের চেহারা ফিরিয়ে প্রিয় নবী -কে দেখতে পেয়ে নিজ দেহ প্রিয়নবী -এর দেহ মুবারকের সঙ্গে লাগানোর চেষ্টা করেন। রাসুল বলতে লাগলেন, এ গোলামকে কে কিনবে? আমি একে বিক্রি করব। জাহের বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে সস্তায় বিক্রি করতে হবে। কারণ আমি কালো কুসিৎ। রাসুল বললেন, তুমি সস্তা নও, আল্লাহর কাছে অনেক দামি। তা ছিল রাসুল -এর রসিকতা। কারণ জাহের গোলাম ছিলেন না। [তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪১৬]

৬. একদিন স্ত্রী আয়েশার নিকটে এসে তার এক বৃদ্ধা খালা রাসূল কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করুন যেন তিনি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। জবাবে রাসূলুল্লাহ বললেন, হে অমুকের মা! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একথা শুনে উক্ত মহিলা কাঁদতে শুরু করল। তখন আয়েশা বললেন, তাদের কি দোষ? জবাবে রাসূল বললেন, তুমি কি কুরআনে পড়োনি যে আল্লাহ বলেছে, ‘আমরা জান্নাতী নারীদের বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি’। ‘অতঃপর তাদের চিরকুমারী করেছি’, সদা সোহাগিনী, সমবয়স্কা’, ‘ডান সারির লোকদের জন্য’ (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৩৫-৩৮)। [ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ওয়াক্বি‘আহ ৩৫-৩৮ আয়াত; রাযীন, মিশকাত হা/৪৮৮৮]

৭. নবী এক সফরে ছিলেন। তাঁর আনজাশা নামে এক গোলাম ছিল। সে হুদী গান গেয়ে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাকে বললেনঃ হে আনজাশা! তুমি ধীরে উট হাঁকাও, যেহেতু তুমি কাঁচপাত্র তুল্যদের (আরোহী) উট হাঁকিয়ে যাচ্ছ। আবূ কিলাবাহ বর্ণনা করেন, কাঁচপাত্র সদৃশ শব্দ দ্বারা নবী স্ত্রীলোকদেরকে বুঝিয়েছেন।।[বুখারী ৬২১০; মুসলিম ২৩২৩; মিশকাত ৪৮০৬] 

৮. ইবনু আব্দিল বার্র হযরত আবু হুরায়রা (রা) হ’তে বর্ণনা করেন যে, একদা আমি আমার জামার আস্তিনে করে একটি বিড়ালছানা নিয়ে আসছিলাম। আল্লাহর রাসূল তা দেখে ফেলেন ও বলেন, ওটা কি? আমি বললাম, বিড়ালছানা। তখন তিনি রসিকতা করে বললেন, ‘তুমিত বিড়ালছানার পিতা বা আবু হুরায়রা’। هِرَّةٌ (হির্রাতুন) বিড়াল هُرَيْرَةٌ ‘ছোট বিড়াল’ أَبُو هُرَيْرَةَ ‘ছোট বিড়ালের বাপ’ [মিরক্বাত ১/৬৯]

খেলাধুলা করা

খেলাধুলা নিয়ে ইসলামে কোনো নিষেধ নেই শুধু প্রথমে উল্লেখ করা শর্তগুলো মানলে যথেষ্ট। কারন আমাদের নবী ও সাহাবিদের থেকে খেলাধুলা করার অনেক প্রমান পাওয়া যায়।

১. রাসূলুল্লাহ -এর উপস্থিতিতে কিছু ইথিওপিয়ান ক্রীড়া প্রদর্শনী চালাচ্ছিল। এমন সময়ে ‘ওমর (রা) এলেন। তিনি একটা পাথর তুলে ওদের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ বললেন, ওমর, ওদের খেলতে দাও। হাদিসটির একজন বর্ণনাকারী মা‘মার বলেছেন, তারা মসজিদে খেলছিল। [বুখারী] আয়শা (রা) হতে বর্ণিত আমার ঠিক মনে নেই আমি রাসূলুল্লাহ -কে বলেছিলাম নাকি তিনিই আমাকে বলেছিলেন যে আমি খেলা দেখতে চাই কি না। আমি যেতে রাজি হয়েছিলাম। তিনি আমাকে রাখলেন তাঁর পেছনে। আমি তাঁর কাঁধের উপর আমার মাথা রেখে খেলা দেখতে লাগলাম। তিনি বললেন, বানু আফ্রিদাহ, খেলা চালিয়ে যাও। খেলা দেখতে দেখতে যখন আর ভালো লাগছিল না, তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, খেলা দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন বললেন, তাহলে চলো এবার।’ [বুখারী]

২. ওমর (রা) একদিন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সঙ্গে বাজি ধরলেন—কে পানির ভেতর দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে! ইবনে আব্বাস তখন বাচ্চা ছেলে মাত্র। বড়জোর তেরো-চৌদ্দ বছর বয়স। বয়ঃসন্ধির সময়। দুজনের মধ্যে বয়সের আকাশ-পাতাল তফাত। তার সঙ্গে ওমর পানিতে ডুব দিয়েছে কে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে পরখ করে দেখার জন্য। [আল মুহাল্লা ১৭৪/৭]

৩. প্রিয়নবী বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ কিংবা উটের প্রতিযোগিতা ব্যতীত (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই।’ [আবু দাউদ, হাদীস ২৫৭৪]

নবী করিম রুকানা নামক এক নামকরা কুস্তিগিরের সঙ্গে লড়েছিলেন। সে ছিল খুবই বলিষ্ঠ। মহানবী একাধিকবার তাকে পরাজিত করেছিলেন। [আবু দাউদ]

হাদিসে তিনটি খেলার নির্দেশনা পাওয়া যায় তীর নিক্ষেপ, অশ্বারোহণ এবং স্ত্রীর সাথে হাস্যরস বা খেলাধুলা করা। [সাঈদ ইবন মানসূর: ২৪৫০, ইবন আবি শাইবাহঃ ৫/৩২০,৩২১, আস-সুগরা: ৬/২৮, আবু দাউদ: ২৫১৩, আল-মুনতাকা: ১০৬২, মুসনাদে আহমাদ ৪/১৪৪, ১৪৬, ১৪৮]

নবীজী বলেন, ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা, এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ [ফিকহুস সুন্নাহ, ২/৬০]

কোন কোন বর্ণনায় এর সাথে যোগ করা হয়েছে, সাঁতার কাটা। [মুজামুল কাবীর ২/১৯৩, (১৭৮৬)]। অপর বর্ণনায় এর সাথে যোগ করা হয়েছে, দৌড় প্রতিযোগিতা করা। [সুনানুল কুবরা ৫/৩০২, (৮৯৩৯)]

৪. আনাস (রা) বলেন, রাসূল আমাদের সঙ্গে মিশতেন। এমনকি আমার ছোট ভাই আবু ওমায়ের একটি ‘নুগায়ের’ অর্থাৎ লাল ঠোট ওয়ালা চড়ুই জাতীয় পাখি পুষত। যা নিয়ে সে খেলা করত। রাসূল যখন এসে তাকে খেলতে দেখতেন, তখন বলতেন, ‘হে আবু ওমায়ের! কি করছে তোমার নুগায়ের? [বুখারী হা/৬১২৯; মুসলিম হা/২১৫০ (৩০); মিশকাত হা/৪৮৮৪]

৫. আয়শা (রা) বলেন, ‘আমি নবী এর সামনেই আমার বান্ধবীদের সাথে পুতুল খেলতাম। যখন রাসুলুল্লাহ প্রবেশ করতেন, ওরা লুকিয়ে যেতো। তখন নবী আমার সাথে খেলার জন্য ওদেরকে ডাকতেন। একবার তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘পাখাওয়ালা ঘোড়া? আমি উত্তর দিলাম, ‘আপনি কি শুনেননি যে সুলাইমান (আ) এর পাখাওয়ালা ঘোড়া ছিল।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ এত হাসলেন [বুখারি খন্ড ৮, আবু দাউদ খন্ড ৩]

তাই নাবালিকাদের জন্য পুতুল নিয়ে খেলা করা জায়েজ আছে। [বুখারী ৬১৩০; মুসলিম ২৪৪০; সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৮৬৩; সুনান আবি দাউদ, হাদীস ৪৯১৪, ৪১২৩]

৬. স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রা) ছিলেন কুমারী ও সবচেয়ে কম বয়স্কা। তাই রাসূল কখনো কখনো সাথীদের এগিয়ে দিয়ে নিজে তার সাথে দৌড়ে পাল্লা দিতেন। তাতে আয়েশা জিতে যেতেন। আবার আয়েশা ভারী হয়ে গেলে প্রতিযোগিতায় তিনি হেরে যান’ [ইবনু মাজাহ হা/১৯৭৯; ছহীহাহ হা/১৩১] 

সংগীত, কাব্য, কবিতা, সাহিত্য, নৃত্য ইত্যাদি

১. হজরত হাসসান ইবনে সাবিত (রা) ভালো কবিতা রচনা করতেন এবং চমৎকার আবৃত্তি করতেন। রাসুলুল্লাহ তাঁর জন্য মদিনা শরিফে মসজিদে নববিতে আরেকটি মিম্বর বানিয়ে দিলেন, যেখান থেকে তিনি তাঁর কাব্য উপস্থাপন করতেন। প্রিয় নবীজি কাব্যপ্রেমী ও ভালো শ্রোতাও ছিলেন। তিনি হজরত হাসসান (রা)-এর কবিতায় মুগ্ধ হয়ে নিজের গায়ের উত্তরীয় তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া]

২. হজরত আয়েশা (রা) অনেক কবিতা লিখেছেন। যেমন ‘লানা শামছুন ওয়া লিল আফাকি শামছুন; ওয়া শামছি আফদালুশ শামছি ছামায়ি। ফা ইন্নাশ শামছা তাৎলাউ বাদাল ফাজর; ওয়া শামছি তাৎলাউ বাদাল ইশায়ি।’ অর্থাৎ আমার আছে সূর্য, দিগন্তেও আছে সূর্য; আমার সূর্যটি আকাশের সূর্য হতে শ্রেষ্ঠ। দিগন্তে সূর্য ওঠে ফজরের পরে; আমার সূর্য উদিত হয় ইশার অন্তরে। [সিরাতে ইবনে ইসহাক, জজবায়ে মারেফাত]

৩. প্রিয় নবীজি প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে যখন মদিনায় গেলেন, তখন দীর্ঘ দুই সপ্তাহের অবিরাম সফরের ক্লান্তিতে মলিন বদনে এক উষালগ্নে যখন সেখানে পৌঁছান, তখন মদিনার ছোট্ট ছেলেমেয়েরা অভ্যর্থনাসংগীত গেয়ে প্রিয় নবীজি -কে স্বাগত জানাল। তারই দুটি চরণ হলো ‘তলাআল বাদরু আলাইনা মিন ছানিয়াতিল বেদায়ে, ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা মা দাআ লিল্লাহি দায়ি।’ অর্থ: সানিয়া বেদা হতে পূর্ণিমা শশী উদয় হলো আমাদের প্রতি; কৃতজ্ঞতা কর্তব্য আমাদের ডেকেছেন তিনি আল্লাহর প্রতি। [ইসলামি বিশ্বকোষ]

৪. আয়েশা (রা) হতে বর্ণিতঃ  "একদা রাসূল তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর (রা) তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল বললেনঃ তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন [বোখারি] প্রতিটা হাদিসে বলা হয়েছে বাদ্যযন্ত্র সহ গান হারাম কিন্তু কোনো হাদিসে বলেনি যে বাদ্যযন্ত্র ছাড়াও গান হারাম। তাই আমরা বলতেই পারি যে যেসব সঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্র যুক্ত করা হয়না সেগুলো যায়েজ।

৫. কোরআন করিমের তিন আয়াতবিশিষ্ট সর্বকনিষ্ঠ সুরা ‘আল কাউসার’ অবতীর্ণ হওয়ার পর তা বিখ্যাত সাবআহ মুআল্লাকাহর (সপ্ত ঝুলন্ত গীতিকা) পাশে কাবাগাত্রে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা দেখে তখনকার আরবের প্রধান কবি লাবিদ মন্তব্য করেছিলেন: ‘লাইছা হাজা মিন কালামিল বাশার’ (ইহা মনুষ্য বাণী নহে)। অতঃপর লাবিদসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক ইসলাম গ্রহণ করেন। [সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া]

৬. আনাছ (রা) থেকে বর্ণিত হাবশিরা রাসূল -এর সামনে হেলেদুলে নৃত্য প্রদর্শন করছিলেন। আর তারা বলছিল, ‘মুহাম্মদ সৎ আল্লাহর বান্দা’ [আহমদ-১২৫৬২] আয়েশা (রা) কে নিয়ে বিয়ে বাড়ীতে বেদুঈন মেয়েদের নাচ-গান শুনেছেন। [বুখারী হা/৫১৯০; মুসলিম হা/৮৯২ (১৮); মিশকাত হা/৩২৪৪; বুখারী হা/৫১৪৭; মিশকাত হা/৩১৪০]

আনন্দ অনুষ্ঠান করা ও উপহার দেওয়া 

দাওয়াত দেওয়া বা অনুষ্ঠান করা, উপহার দেওয়া নেওয়া ইসলামে যায়েজ আছে। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে অপচয় যাতে না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

১. একবার নবীজি সফরে থাকা অবস্থায় হজরত আয়েশা (রা) এক দাসীকে বিয়ে দিলেন। নবীজি সফর থেকে ফিরে এসে জানতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন: তার বিয়েতে কি আনন্দ অনুষ্ঠান করেছ? হজরত আয়েশা (রা) বললেন, না। নবীজি বললেন, কেন করোনি? [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া] 

২. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ মদিনায় আগমনের পর দেখলেন, মদীনাবাসী দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা আনন্দ ও খেলাধুলা করতে। ওই দিনের বদলে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন দিয়েছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার দিন।’ [আবু দাউদ, হাদিস ১১৩৬, নাসাঈ, হাদিস ১৫৫৬] ও নিশ্চয়ই প্রত্যেক জাতির খুশির দিন রয়েছে। আর ঈদ হলো আমাদের খুশির দিন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস ৯৫২]

৩. রাসূলুল্লাহ বলেছেন- তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া-উপহার দাও। এ উপহার অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। [আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫৯৪, জামে তিরমিযী, হাদীস ২১৩০]

৪. যে ওলিমায় কেবল ধনীদেরকেই আমন্ত্রণ জানানো হয় আর গরীবদেরকে বর্জন করা হয়, সে ওলিমার খাবার নিকৃষ্ট খাবার। আর যে আমন্ত্রণ রক্ষা করে না, সে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর অবাধ্য হল। [সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১৭৭]

৫. কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ‘এক লোক রাসুল -কে ভালো ও মন্দ কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ভালো কাজ যা অন্তরকে স্বস্তি দেয় ও আত্মাকে প্রশান্ত করে। আর পাপ কাজ হলো যা অন্তরে কালো দাগ ফেলে দেয় এবং অন্তরে দ্বিধা ও সংশয় সৃষ্টি করে।’ [মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৮০৩০]

সাজ-সজ্জা করা 

অনেকে মনে করেন ইসলামে সাজসজ্জা করতে মানা করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা এমন না বরং ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে রূপচর্চা করার, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার, স্মার্ট হয়ে চলার। শুধু কিছু বিধিনিষেধ আছে।

১. সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি কৃপণতা করে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে ইসলামে তাদের অপছন্দ করা হয়েছে। একবার আবুল আহওয়াসের পিতা মালিক বিন আউফ রাসুলুল্লাহ -এর কাছে এলেন। তখন তাঁর পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোশাক। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, কী সম্পদ আছে? আমি বললাম, সব ধরনের সম্পদই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার ওপর তাঁর নিয়ামতের ছাপ থাকা চাই। [নাসাঈ, হাদিস ৫২৯৪]  অমুসলিমদের পোশাক পরা যাবে না [সহীহ মুসলিম ৬/১৪৪, তবারানি আওসাত, হাদিস ৩৯২১] অহংকারবশত কোন কাপড় পরা যাবে না, মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলা ছেলেরা টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান করা, দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির জন্য পোশাক পড়া যাবে না। [সুনানে আবু দাউদ ৪০২৯, সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদীস ২৭৫, সহীহ বুখারি, হাদিস ৫৭৯১], পুরুষদের জন্য জাফরানী রং, রেশমী কাপড়, গাঢ় লাল, হলুদ পোশাক পরা যাবেনা। [সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৫৩৪৬, সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৫২৪৫, সহীহ বুখারী হাঃ নং ৫৪১৭, ৫৪২০]

২. মহান আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। ইসলাম সৌন্দর্যচর্চার অনুমোদনও দিয়েছে। তবে এর একটি সীমারেখা নির্ধারিত আছে, যেন তা পাপে পরিণত না হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা (হালাল) যা ইচ্ছা খাও, পান করো ও পরিধান করো। তবে যেন তাতে দু’টি জিনিস না থাকে- অপচয় ও গর্ব।’ নবী ﷺ নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণী নারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন [বুখারী ৫৮৮৬, দারিমী ২৬৪৯, আবূ দাঊদ ৪৯২৯, মুসলিম, হাদিস ৯১, আবু দাউদ, হাদিস ৪০৯২], টাইট্ফিট আটষাট পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। মাহরামদের সামনেও ব্যবহার উচিত নয়। পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোন প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। [ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৫, আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উষা­ইমীন ৪০পৃঃ]

৩. আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দরতর অবয়বে তাই উল্কি অর্থাৎ ট্যাটু আকা যাবে না, ভ্রু ফ্লাক করা যাবে না, প্রয়োজন ছাড়া দাঁত ফাক করা, অযথা প্রাকৃতিক দেহ গঠনের পরিবর্তন, ছেলেরা মাথা নেড়া করার সময় মাথার কিছু অংশ নেড়া করা এবং কিছু অংশের চুল অবশিষ্ট রাখা বৈধ নয়। বরং নেড়া করলে সম্পূর্ণভাবে নেড়া করতে হয়। কালো কলপ করা যাবে না অন্য কালার ব্যবহার করা যাবে। [ত্বীনঃ ৭, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫১১০, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৯২১, বুখারি, হাদিস ৪৮৮৬, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৪৪২৪]

৪. বল, ‘যে সব সৌন্দর্য-শোভামন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কে তা হারাম করল’? বল, ‘সে সব হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বিশেষতঃ ক্বিয়ামাতের দিনে। এভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি। [সূরা আল আরাফ, আয়াত ৩২], কোন বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য আনয়নের জন্য অপারেশন বৈধ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করা বৈধ নয়। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা মাংস হাতে বা দেহের কোন অঙ্গে লটকে থাকলে তা কেটে ফেলা বৈধ। কোন আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার দূষণীয় নয়। যেমন, সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। [ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ, যীনাতুল মারআতিল মুসলিমাহ ১২২ পৃঃ, ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩৩]

৫. সুর্মা হল সুরমাদের প্রসাধন এবং নারী-পুরুষ সকলের জন্য কিছু চক্ষু-পীড়ার ওষুধ। বিশেষ করে ‘ইষমিদ’ নামক সুর্মা ব্যবহার করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পাতার লোম গজায়। প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নত। অন্তত দুই সপ্তাহে একবার কাটলেও চলবে। তবে ৪০ দিনের বেশি না কাটা অবস্থায় অতিবাহিত হলে গুনাহ হবে। [মুসলিম, হাদিস ২৫৮, আবূ দাঊদ হা/৩৮৭৮, তিরমিযী হা/১৭৫৭], দাঁত অস্বাভাবিক ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা তুলে ফেলা বৈধ। কিন্তু কোন গ্রহনযোগ্য কারন ছাড়া দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান ঘষে ফাঁক-ফাঁক করে চিরনদাঁতীর রূপ আনা বৈধ নয়। [তামবীহুল মু’মিনাত ২৮পৃঃ, ফাতাওয়া মারআহ ৯৪পৃঃ, সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪, আদাবুয যিফাফ ২০৩পৃঃ], নখে নখপালিশ ব্যবহার অবৈধ নয়, তবে ওযুর পূর্বে তুলে ফেলতে হবে কারন নেইল পালিসের ওযু হবে না। মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেদী ব্যবহার মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং মহিলাদের নখ সর্বদা মেহেদী দ্বারা রঙ্গিয়ে রাখাই উত্তম। এতে এবং অনুরূপ আলতাতে পানি আটকায় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে যাবে। [ইলা রাববাতিল খুদূর ১০১পৃঃ, আবূ দাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৭, ফাতাওয়াল মারআহ ২৬পৃঃ]

৬. কান ফুঁড়িয়ে অলঙ্কার ব্যবহার মহিলার জন্য বৈধ। মহিলাদের ঘাড়ের অলঙ্কার হিসাবে হার ও মালা পরার প্রথা আল্লাহর রসূল এর যুগেও প্রচলিত ছিল। নাক ছিদ্র ফুড়িয়ে তাতে অলঙ্কার ব্যবহার বৈধ [বুখারী ৯৮, ৯৬৪, ৯২১, ৪৮৯৩, ৪৯৫১, ৫৮৮১, ৫১৮৯; ফাতাওয়া মারআহ ৮২পৃঃ, মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ৪/১৩৭, আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ ১/১৫৪, ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা ২৪/৩৪; Islamqa ১০৫৪১৫]

৭. তবে কোনো মহিলার চেহারায় দাড়ি-মোচ উঠলে তা উপড়ে ফেলা উত্তম। মহিলার চেহারায় যদি অস্বাভাবিক লোম গজিয়ে ওঠে; তাহলে তা যে কোন প্রকারে দূর করা বৈধ। [রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭৩, ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ ২১৭৭৮, ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়া মারআহ ৯৪পৃ.], অপ্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল পুরুষের মতো ছোট করা নাজায়েজ। [ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮] রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পুরুষের সাজসজ্জা হলো- সুগন্ধি লাগানো, যা আকর্ষণীয় রঙের হবে না। আর নারীদের সাজসজ্জা হলো- রংবেরঙের, তবে তার সুগন্ধি যেন বাইরে না ছড়ায়।’ [সুনানে তিরমিজি ২৭৮৭] মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেদী ব্যবহার উত্তম [আবূ দাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৭] চুল ঘার পর্যন্ত লম্বা রাখা উত্তম ছেলেদের জন্য, এলোমেলো চুল না রাখা, সবাই তেল ব্যবহার উত্তম [আবূ দাঊদ হা/৪১৮৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৩৪৪] আল্লাহর রসূল বলেন, ‘‘তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও খোশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা।’’[আহমাদ, নাসাঈ, হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৩১২৪], ক্ষতিকারক পদার্থ না থাকলে মেকআপ করা বৈধ [ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৯]

৮. ছেলেরা দাড়ি রাখবে ও মোচ ছোট করতে হবে। মেয়েদের প্রশাধনীর সব কিছু ব্যবহার করা যায়েজ যেগুলো মানব দেহের ক্ষতি করে না ও নাপাক নয়। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘হালাল এবং হারাম সুস্পষ্ট, আর ঊভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় বা বস্তু আছে। সে সম্পর্কে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে যেই ব্যক্তি সন্দেহের বস্তুকে পরিহার করে চলবে, তার দ্বীন এবং আবরু-ইজ্জত, মান-সম্মান পাক-পবিত্র থাকবে। পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি সন্দেহের কাজে লিপ্ত হবে, সে অচিরেই হারামেও লিপ্ত হয়ে পড়বে। [মিশকাত ২৭৬২; সহীহুল জা’মে ১০৬৭; তিরমিযী, ২৭৬২], রাসূল বলেছেন “যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।“ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪০৩১, সহীহুল জামে-আলবানী হা/২৮৩১], যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [তিরমিযী ২৬৯৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২১৯৪]

চিত্র অঙ্কন, ছবি তোলা, ভিডিও করা, বই পড়া ইত্যাদি

১. প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। [সহিহ বুখারি, হাদিস ২৯৯৮, ৪৭৮৩, ৫৪৯৮, ৫৯৫০; মুসলিম ২১০৯, ৯৬৯; আল মাউসুআতুল ফিকহিয়াতুল কুয়িতিয়্যাহ – ১২/১০৫] ইসলামী শরিয়ত মতে, কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন- বৃক্ষ, পাহাড়, ঝরনা জড় বস্তু বা প্রাকৃতিক জিনিসে ইত্যাদির চিত্র অঙ্কন বৈধ। [সহীহ বুখারী ২২২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৬২, আল-বাহরুর রায়েক ২/২৯, মেরকাতুল মাফাতিহ ৪৪৮৯, শারহুল বুখারি, ইবনলু বাত্তাল – ৯/১৮০, আল হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম – ১৫৭, আল হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম -১২৯, শরহে নববী ১৪/৮১]
 
২. পিছন থেকে মানুষের প্রতিকৃতি অঙ্কনে যদি চোখ, মুখ ও নাকের আকৃতি বোঝা না যায় তবে তা জায়েয হবে। কেননা মাথা না থাকলে তা ছবি হিসাবে গণ্য হয় না। [ইবনু কুদামাহ. মুগনী ৮/১১১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৭৮-৭৯]

তিনি আরো বলেন, ‘ছবি হ’ল মাথা। মাথা যখন কেটে ফেলা হবে তখন সেটি ছবি থাকে না’ [ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৬৪; ছহীহাহ হা/১৯২১]

মানুষ বা প্রাণীর শুধু ছায়া বিশিষ্ট ছবি বা অবয়ব অংকন, ছায়া বিহীন ছবি (শুধু প্রয়োজনে), ও চিত্রে এমন ভাবে আকৃতিগুলা তৈরি করা যেগুলাতে প্রাণীর সাথে প্রায় অংশ হুবহু মিলে না বা চেহারা চিত্রে ফুটে উঠে না বা চিত্র থেকে এমন কিছু বাদ দেওয়া যেটার কারনে সেই চিত্রের প্রাণীকে প্রকৃত অর্থে প্রাণের চিত্র্র মনে হবে না সেগুলা তৈরি জায়েজ আছে।’ হাম্বলি মাযহাব সহ অন্য মাযহাবের অনেক আলেমের মতে পরিধান করা হয় না ও টাঙ্গিয়ে রাখা হয়না এমন কাপড়ের উপর চিত্র অংকন জায়েজ। [সুনানে বায়হাকী ৭/২৭০; মুসনাদে আহমদ ১/৩৫৩; সহিহুল জামে-আলবানি ৩৮৬৪; আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়িতিয়্যাহ ১২/১০৪; ফিকহুস সুন্নাহ ৩/৫০২; আল মুগনি ৭/২২৫, ৮/১১১, ১০/২০১; আল্লামা উবাই (রহ), শরহে মুসলিম ৫/৩৯৪; উমদাতুল কারী, ১০/৩০৯; শাইখ ইবনে উসাইমিন এর মাজমু’ ফতোয়া, ২/৩৩১; ফাতহুল বারী ১০/৩৮৩, ৩৮৮; খারাসী আলা মুখতাসিরিল খালীল ৩/৩০৩; দুসূকী ২/৩৩৮; আয-যারকানী আলা মুখতাসিরিল খালীল ৪/৫৩; শরহে সগীর গ্রন্থের ছাবী (রহ) কৃত টিকা ২/৫০১]
 
৩. ফটোগ্রাফি অর্থাৎ নরমাল বা মোবাইলের ক্যামেরার মধ্যেমে ছবি তোলা বা ভিডিও করা জায়েজ আছে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া কোন প্রাণীর ছবি প্রিন্ট করে বের করা জায়েজ নেই। [মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল, বিন উসাইমিন – ২/২৬৩, ২/২৬৫; ফাতাওয়া শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ -১/৩; আল হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম – ১৩৭/১৩৮, ১৫৭; তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০; ফাতহুল মুলহিম ৪/১৬২-১৬৩; ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৮৪; আহসান আল ফাতোয়া ৮/৩০৬; তাফসীরে আয়াতুল আহকাম ২/৩০০; ফিক্বহী মাক্বালাত ৪/১২৩-১৩০; জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল ১/৩৫৪]

অনলাইনে কোন হারাম ও নারীদের ছবি ছাড়া নিজের শালিন ছবি আপলোড করলে তা জায়েজ কিন্তু শুধু পুরুষদের জন্য জায়েজ, নারীদের জন্য অনলাইনে নিজের ছবি আপলোড করা যায়েজ নেই কারন এতে পর্দার লঙ্গন ও ফিতনা সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। অবশ্যই অযথা পুরুষদের জন্যও অনলাইনে ছবি দেওয়া অনুত্তম। অবশ্যই বেশির ভাগ আলেমদের মত হচ্ছে অথযা প্রাণীর ছবি তোলা মাকরুহ [তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৬৪; শেখ আবদ আল-রাজ্জাক আকিফি ১/৩০৫]
 
টিভি, রেডিও, টেপরেকর্ডার, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় হওয়ায় এসব জিনিসকে সরাসরি হারাম বলা করা হয়নি। বর্তমানের প্রায় সব ফকিহ একমত যে এসব যন্ত্রপাতিকে জায়েয কাজে ব্যবহার করলে বৈধ এবং না জায়েয কাজে ব্যবহার করলে অবৈধ।
 
৪. ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো।’ [সুরা আলাক, আয়াত ১-৩] ‘বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ [সুরা যুমার আয়াত ৯] 
 
৫. গল্পের বই না পড়াই ভালো কারন সেখানে সব কাল্পনিক গল্প থাকে এগুলা পড়লে শুধু শুধু নিজের সময় নষ্ট হয়। রাসূল্লাহ বলেছেন, জরুরী নয় এমন কাজ সে (মুমিন) ত্যাগ করে। [জামে তিরমিজী ২২৩৯] গল্পের বই ছোটরা পড়তে পারবে তাতে কোন আপত্তি নেই। ইমান নষ্ট হওয়া সম্ভবনা আছে এমন বই পড়া যাবে না, কিন্তু বাধ্য হয়ে বা জ্ঞান অর্জনের জন্য ও সতর্ক থেকে পড়া যায় তাহলে পড়তে পারবে। এছাড়া সব ধরনের বই পড়া যাবে।
Ashraful Nafiz

I am an ordinary Muslim student who is interested in acquiring the beneficial knowledge given by Allah and hopes to spread that knowledge among the people. facebook youtube twitter instagram quora

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Would you tell me something

নবীনতর পূর্বতন