সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে একটি পর্যালোচনা (Existence of Allah)

আমাদের দেশে আস্তিক নাস্তিক সবার সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে নাস্তিকরা প্রশ্ন করে থাকে যেমন, ‘সুষ্টিকর্তাকে কেন বিশ্বাস করব? সৃষ্টিকর্তা আছে তার প্রমান কি? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্তা কে? সৃষ্টিকর্তা একজন নাকি একের অধিক?’ ইত্যাদি। সবগুলার উত্তর দেওয়া চেষ্ট করব ইনশাআল্লাহ।

Table of Contents

{tocify} $title={Table of Contents}

আপনি কেন সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহকে বিশ্বাস করবেন? 

কেন করবেন সেটা না হয় পরে বলব আগে আমি আপনাকে শুধু বলব চিন্তা করুন, আপনি আল্লাহকে কেন বিশ্বাস করবেন সেটা চিন্তা করুন। কোরআনে আপনাকে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -

 'তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মদ : ২৪)

 তারা কি আসমান-যমীনের রাজত্বে আর আল্লাহ যে সব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তাতে কিছুই দেখে না? তারা কি চিন্তা করে না যে হয়ত তাদের জীবনের মেয়াদ নিকটেই এসে গেছে? (সূরা আরাফ : ১৮৫)  

তারপরেও কি তোমরা চিন্তা করবে না? (সূরা ইউনুস আয়াত ১৬ )

 অতএব আল্লাহর রহমাতের ফল সম্পর্কে চিন্তা করুন, কীভাবে তিনি ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন। (সূরা আর রূম : ৫০)

কোরআন বলছে চিন্তা বা গবেষনা করুন কিন্তু আপনারা তা না করে, নাস্তিকতা গ্রহন করেন বা উলটা পালটা প্রশ্ন করেন ও সেটার উত্তর পাওয়ার পরও উলটাপালটা কথা বলেন। যাইহোক কি নিয়ে চিন্তা করবেন তা বলি। যেমন- চিন্তা করুন কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর মাধ্যমে কিভাবে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব মহাবিশ্ব? সবকিছু কি অনর্থক সৃষ্টি হওয়া? এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন ইনশাআল্লাহ উত্তর আপনা আপনি পেয়ে যাবেন। আরো চিন্তা করুন মাত্র কয়েকটা কলকব্জা দিয়ে বানানো রোবটেরও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আছে। আর ৪০ ট্রিলিয়ন সেলের সমন্বয়ে গঠিত মানুষের নাকি কোন সৃষ্টিকর্তা নেই?

এইটা পড়ুন তাহলে চিন্তা করতে সুবিধা হবে।  নাস্তিকদের কাছে সঠিক ও গ্রহনযোগ্য উত্তর নেই এমন অনেক প্রশ্ন এটাতে আছে, তাই অবশ্যই একবার পড়ে দেখবেন।

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমান 

স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমান আমি না দিলেও চলে। আপনি যে দেহে প্রাণ নিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে উলটা পালটা কথা বলছেন সে প্রাণ বা রুহ কোথা থেকে এল আবার কোথায় চলে যায় তা চিন্তা করলেইত হয়। আপনা আপনিই প্রমান পেয়ে যাবেন।

ইসলামিক স্কলাররা বলেছেন আল্লাহর অস্তিত্তের প্রমাণ হল চারটি- ১। আকল বা বোধশক্তি ২। ইন্দ্রিয় বা সেন্স ৩। ফিতরাৎ- সহজাত বা অন্তর্জাত প্রবণতা ৪। শারিয়া  


কোন কিছু প্রমান করতে বেশ কয়েকটা জিনিস দেয়া যায়। যেমন লিখিত দলিল, আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রমান, শাক্ষি ইত্যাদি। আবার সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমানে লিখিত দলিল, বিজ্ঞান, শাক্ষি, যুক্তি, দর্শন, সহজজাত প্রমান, ও তার বানানো সৃষ্টি ও সবচেয়ে বড় কমনসেন্স দেখিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু নাস্তিকরা স্রষ্টার প্রমান বলতে কি বুঝায় তারা হয়ত নিজেরাও জানে না। তারা এই আর্টিক্যালটা যদি পড়ে তাহলে পুরোটা পড়ে হয়ত বলবে এটা কোন প্রমান না, এই কথা বলে নিজেরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগবে। কারন যত বড় প্রমানই দেওয়া হোক না কেন তারা সেটা মানতে চায় না।


নাস্তিকরা বলে আস্তিকরা অন্ধবিশ্বাসী। না দেখে বিশ্বাস করাকে অন্ধ বিশ্বাস বলে না। বিভিন্ন আলামত দেখে কেউ আল্লাহ অস্তিত্ব বুজে তাকে বিশ্বাস করলে তাকে অন্ধ বিশ্বাস বলা যায় না। বরং যারা সত্য দেখেও বা উপলব্ধি করেও না দেখার বা না বুঝার ভান করে তারাই অন্ধবিশ্বাসী।


বিজ্ঞান 


নাস্তিকরা সৃষ্টিকর্তাকে দেখেন না ও অনুভব করেন না তাই স্রষ্টা আছে সেটা বিশ্বাসও করতে চায় না অথচ শক্তি, তরঙ্গ, আলো, প্রকৃতি, মহাকর্ষ বল, আবেগ, রেখা, সংখ্যা, ভালোবাসা, বিশ্বাস, কোয়ান্টাম কণা, অ্যান্টিমেটার, ডার্ক ম্যাটার, রেডিও ওয়েভ, অক্সিজেন, অতিবেগুনি, আলফা, গামা, বিটা রশ্মি ইত্যাদিকে দেখে না ও অনুভবও করতে পারে না তারপরও সেগুলাকে ঠিকই বিশ্বাস করে! এসব ডাবল স্ট্যার্ন্ডাড ছাড়া আর কিছুই না। রিয়ালিটি বা অস্তিত্ব শুধু মাত্র আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় কারন এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলার অস্তিত্ব আছে কিন্তু তা আমরা পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বুঝতে পারিনা। 


➤ আমেরিকান নাস্তিক জোতির্বিদ নিল ডিগ্রাসি বলেন , "বর্তমানে মানুষ যদি নিজের ইন্দ্রিয় দিয়ে সমস্তকিছু জাস্টিফাই করে তাহলে তার জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।" [ Neil Degrasse Tyson,Coming to our scenes] আমেরিকার দার্শনিক জর্জ সান্তায়না এই ধরনের বিশ্বাসকে (পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় না কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে এমন জিনিসকে) বলেছেন "অযৌক্তিক বিশ্বাস।" [David Ray Griffin,The Oxford Handbook of religion and science; page 458]

 

আমাদের এই সমস্ত সৃষ্টিই স্রষ্টা থাকার প্রমান, শূণ্য থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি (এই বিষয়টাকে অনেকে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে বৈজ্ঞানীক ভাবে ব্যখ্যা করতে চায় কিন্তু সেটা করতে গেলে অনেক অনেক কিছুই ব্যখ্যা করতে পারে না তারা), প্রাণহীন মহাবিশ্বে প্রাণের উৎপত্তি, বিগ ব্যাগ হওয়ার পর চরম বিশৃঙ্খলা থেকে প্রায় সব কিছু সুবিন্যস্ত হওয়া, শারীরিক অস্তিত্ব আছে এমন জিনিস থেকে শারীরিক অস্তিত্ব নেই এমন জিনিস পাওয়া, প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা ও সচেতনতা থাকা ইত্যাদি এগুলা সৃষ্টিকর্তা থাকার সবচেয়ে বড় প্রমানগুলোর মধ্যে কয়েকটি। আরো জানতে চাইলে এটা পড়তে পারেন The Fine Tuning Argument/Argument from design, Biological design arguments কারন এগুলা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানীক তথ্য সমৃদ্ধ মতবাদ, এছাড়া আছে Argument from Dependency, Kalam Cosmological argument, Moral argument, Contingency argument, Ontological argument, Argument from consciousness, The design argument, Teleological argument ইত্যাদি। আবার সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের অনেক প্রমান পাবেন, “বস্তুবাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ, অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়, The Devil’s Delusion, There is a God, The Language of God“ ইত্যাদি বইগুলোতে, চাইলে পড়ে নিতে পারেন।  


শূন্য থেকে সৃষ্টিজগত তৈরি হওয়াটা যে যৌক্তিকভাবে হাস্যকর একটা তত্ত্ব, সেটা নিয়ে ড: ডেভিড বিস্তারিত যৌক্তিক প্রমাণ দিয়েছেন। এমনকি মাল্টিভারস তত্ত্ব যে আসলে একটা পলিটিকাল কৌশল, যেখানে দুর্বোধ্য গণিতের আড়ালে নাস্তিকরা লুকিয়ে থেকে তাদের সেক্যুলার মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছে–সেটা তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। DNA-তে ৩০০ কোটি অক্ষরে যে এক প্রচণ্ড সৃজনশীল এবং অকল্পনীয় জ্ঞানী সত্তার স্বাক্ষর স্পষ্টভাবে লেখা আছে, সেটা ড: ফ্রান্সিস সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন, যা আধুনিক নাস্তিকতার জনক এনথনি ফ্লিউকেও শেষ পর্যন্ত আস্তিক হতে বাধ্য করেছে পরে তিনি বলেছিলেন যে, “DNA ইনভেস্টিগেশন থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রাণ (Life) সৃষ্টিতে অবশ্যই অবশ্যই Intelligence তথা বুদ্ধিমান সত্ত্বার উপস্থিতি আবশ্যক।” আধুনিক জীব বিজ্ঞানের আস্তিক জনক লুই পাস্তুর বলেছেন,- ‘The more I study science the more I think about God’.

 

বাস্তবে বিজ্ঞান চলে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে, আর প্রকৃতিকে যিনি চালনা করেন তিনি সৃষ্টিকর্তা, বিজ্ঞান সবকিছুর কারণ খুঁজে বের করে, আর কারণ যিনি সৃষ্টি করেন তিনি সৃষ্টিকর্তা। অনেকে বলে প্রাকৃতিক ভাবে সব সৃষ্টি হয়েছে একটা নিয়মের মাধ্যমে এতে নাকি সৃষ্টিকর্তার কোন হাত নেই, এখন প্রশ্ন আসে যে, যে নিয়মের কথা বলছেন সেটা আপনা আপনি প্রকৃতি তৈরি করল কিভাবে যদি তার নিজস্ব কোন জ্ঞান, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবন শক্তি, অন্যান্য ধরনের শক্তি, অনুভুতি ইত্যাদি নাই থাকে? আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,


পৃথিবীতে বিশ্বাসী মানুষের জন্যে (বিশ্বাসের) বহু নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। খোদ তোমাদের মাঝেও আছে। তবু কি তোমরা তোমাদের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাবে না? (সূরা ৫১ যারিয়াত, আয়াত ২০-২১)

এই আয়াতের আলোকে কিছু বিষয় উল্লেখ করা যায় -  DNA এর বহুমাত্রিক জটিল কাজ ও বিন্যাস, মানব শরীরের ভিতর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন রাসায়নিক পদার্থের বিলিয়ন বিলিয়ন রাসায়নিক বিক্রিয়া, মস্তিষ্কের ভয়ানক জটিল কার্জক্রম ও গঠন, সবচেয়ে সুন্দরতম দেহগঠন ইত্যাদি। 


পৃথিবীতে প্রায় ৮৮ লক্ষ প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব খুজে পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে শুধু মানুষের দেহ সম্পর্কে A-Z সব কিছু ছোট করে ব্যাখ্যা করে বই লিখতে গেলেও কমপক্ষে ২- ২.৫ হাজার এর অধিক পৃষ্ঠার একটা ছোট খাটো ইনসাইক্লোপিডিয়া তৈরি করা সম্ভব। 


আমাদের দেহে যে DNA আছে তার মোট দৈর্ঘ্য ২০০০,০০,০০,০০০ কি.মি যা পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত ৫০ বারেরও বেশি আসা যাওয়া করলে যে দূরত্ব অতিক্রান্ত হবে, তার সমান। ১ গ্রাম DNA প্রায় ৪৫৫ এক্সাবাইট ডেটা ধারণ করতে পারে!! আর DNA তে যে ইনফরমেশন আছে তা যদি লিপিবদ্ধ করা হয়, তবে তা হবে ৯২০ খণ্ডের বিশালাকার এনসাইক্লোপিডিয়ার সমান যেখানে প্রতিটি খণ্ডের পৃষ্টা সংখ্যা হবে ৫০০ এবং বইগুলো একটির উপর একটি রাখা হয় তাহলে এটি উচ্চতায় ৭০ মিটার স্থান দখল করবে। ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানি ইএমসির অনুমান অনুসারে ২০১১ সালে পৃথিবীতে ১৮০০ এক্সাবাইট ডেটা ছিল, যার মানে প্লেটো থেকে শেক্সপিয়ারের সম্পূর্ণ কাজ থেকে সমস্ত গুগল, ফেসবুক, টুইটার সহ সমস্ত ওয়েবসাইটে যত ডেটা আছে সমস্ত কিছু ধরে রাখতে আমাদের মাত্র 4 গ্রাম (প্রায় এক চা চামচ) ডিএনএ এর প্রয়োজন হবে।


মানুষের মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা মোট ৮৬ বিলিয়ন এছাড়া মোট কোষের পরিমান ১৭০ বিলিয়ন, মানবদেহে প্রায় ২০-৩০ ট্রিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা থাকে, আমাদের দেহে মোট কোষের সংখ্যা হলো প্রায় ৩৭.২ ট্রিলিয়ন মোট কোষ ও ব্যাকটেরিয়া প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন, মানবদেহে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫০ হাজার কোষ মারা যায় এবং নতুন ৫০ হাজার কোষ সৃষ্টি হয়, সেন্সরি রিসেপ্টর আছে ১১০ মিলিয়ন, দেহে মোট ব্লাড ভেসেল আছে ৪২ বিলিয়ন, যা ৯৭,০০০ কি.মি লম্বা, একটু চিন্তা করুন তো! এক হাত লম্বা একটা হেডফোন অতি যত্ন করে রেখে দিলেও জট পাকিয়ে যায়। কিন্তু আপনার দেহের ৯৭,০০০ কি.মি ব্লাড ভেসেল কখনোই জট পাকিয়ে যায়না, স্নায়ুগুলোর মাধ্যমে দেহ থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে দেহে সংকেত আসা যাওয়া করে সর্বোচ্চ প্রতি ঘন্টায় ২৬৮ মাইল গতিতে, মানুষের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা ২.৫ পেটাবাইট বা ১০ লাখ গিগাবাইট, পৃথিবীতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে বা যত মানুষ আসবে কারও ফিঙ্গারপ্রিন্স অন্যা কারো সাথে মিল ছিল না, নেই, থাকবেও না, সুবহানাল্লাহ! পূর্ণবয়স্ক মানবদেহে শ্বসন কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ফুসফুসের অ্যালভিওলাস যার মোট সংখ্যা ৭০ কোটির কাছাকাছি, কিডনির গঠনগত ও কার্যগত একক নেফ্রন যার মোট সংখ্যা মানবদেহে প্রায় ২০ লক্ষের বেশি, পাকস্থলিতে রয়েছে ৪০ মিলিয়ন গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে পরিপাকে। এত জটিল, অদ্ভুদ, আজব, রহস্যময় প্রকৃতি ও গঠনের মানুষ কোন বুদ্ধিমান সত্তার হাত ছাড়া দুনিয়ায় অস্তিত্বে এসেছে বা বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে তা চিন্তা করতেও কষ্ট লাগে, কারন বিবর্তনেরই হাজারো সমস্যা ও সিমাবদ্ধতা রয়েছে।


শুধু মানব দেহ সম্পর্কে এমন অনেক অনেক কিছু বলা যাবে যেগুলা কোন মোটামুটি বিজ্ঞান জানা মানুষ পড়লে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস করতে তার জ্ঞান অনেক বেশি উৎসাহ দিবে। শুধু মানুষের কথা বললাম কিন্তু ৮৮ লক্ষ প্রজাতিরও বেশি প্রাণী রয়েছে এই পৃথিবীতে,পৃথিবীর ৪ ভাগের ৩ ভাগ পানি আর ১ ভাগ স্থল এবং সেই পানি বা সাগরের ২০% সম্পর্কে জানতে পেরেছে কিনা মানুষ তাও সন্দেহ, বিজ্ঞানীরা আমাদের এই মহাবিশ্বকে একটা গোলাকার বস্তুর মত চিন্তা করেছেন এবং তাদের মতে এই মহাবিশ্বের ব্যাস প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। আপনি হয়ত চিন্তাও করতে পারছেন না এটা কত বড়, শুধু এই নয় বিজ্ঞানীরা এখনও জানতে পারেনি এই সিমানার পরে আর কি আছে। শুধু আকাশগঙ্গা ছায়াপথে শুধু গ্রহের সংখ্যা আনুমানিক ১৭০০ কোটি চিন্তা করেন পুরো মহাবিশ্বে কতগুলা গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি থাকতে পারে, এই ৯২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাস বিশিষ্ট মহাবিশ্বে প্রায় 10^80 এর মত পরমানু আছে। জ্যোতির্বিদরা মনে করছেন দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় ১০০ বিলিয়ন (১০^১১) গ্যালাক্সি আছে। দৃশ্যমান মহাবিশ্বে আনুমানিক ৩ x ১০^২৩টি তারা থাকতে পারে। মানুষ সেই মহাবিশ্বের ঠিকমত ২% দেখেছে কিনা তাও সন্দেহ, এই পৃথিবীর বাহিরে কোন জীব আদো আছে কিনা বা কোন ধরনের জীব আছে সেটাত আমরা জানিই না। বিজ্ঞানের জনপ্রীয় থিয়োরির একটি হলো মাল্টিভার্স থিয়োরি। যা বলে, আমাদের ইউনিভার্সের মতো এমন আরো অনেক ইউনিভার্স আছে। তার মানে এই মাল্টিভার্সের বাইরে যা কিছু আছে তার কোন ধারণাই আমাদের নেই! আর ধারণা নেই বলে সেগুলোকে অস্বীকার করা কোন বুদ্ধিমানের পরিচয় বলে মনে হয় না।


সময়ের বিখ্যাত নাস্তিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাস্তিক জনগণের দাবি, "হয়তো আনুমানিত ৪শত কোটি বছর আগে পানিতে নিজ থেকে আপনা আপনি ভাবে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি, তারপর সেই এক কোষী প্রাণ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে বহুকোষী প্রাণের সৃষ্টি হয়।" আবার অনেকের ধারনা, “জীবের উৎপত্তি হয়ত নিজ থেকে আপনা আপনি ভাবে জড় বস্তু থেকে হয়েছে।” এখানে "হয়তো" শব্দটি ব্যাবহার করে তারা যা বলেন তা শুধুমাত্র তাদের ধারণা! প্রশ্ন হচ্ছে এই ধরনের বক্তব্য কি আদৌও গ্রহণযোগ্য কিনা? সেটা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি পড়ে দেখবেন আশা করি। - প্রাণের আবির্ভাব স্রষ্টা ছাড়া হওয়া কতটুকু সম্ভব?


আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের স্ট্রিং থিয়োরি থেকে প্রায় ১১টি ডাইমেনশনের প্রমান মেলে। অথচ, কেওই তা নিশ্চিতভাবে কোনদিনও দেখতে ও পর্যবেক্ষন করতে পারবে না।আশ্চর্য জনক বিষয় হলো হায়ার ডাইমেনশনের জীব আমাদের ডাইমেনশনে ইজিলি পরিবর্তন করতে পারবে। আমরা তাদের দেখতেও পারবো না আবার অনুভবও করতে পারবো না। এমনকি কল্পনাও করতে পারবো না কিভাবে কী হলো।  তাহলে, এটা সহজেই বুঝা উচিত যে, কেও যদি এই ১১টি ডাইমেনশনের উপরে থাকেন তাহলে তিনি কতটা পাওয়ারফুল। এমন একজন অবশ্যই থাকবেন যিনি এই সব কিছুর ঊর্ধে। যার এসবকিছুর কোনই প্রয়োজন পড়ে না। বরং, তিনি নিজের ক্ষমতা ব্যাবহার করে যখন তখন এসব সৃষ্টি করতে পারেন। আবার, যখন তখন তা ধ্বংস করতে পারেন। 


বিজ্ঞান মহলে সুবিদিত চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নটাই হচ্ছে,- Why there is something rather than nothing?’ কেনো ‘কোনকিছু’ না থাকার বদলে ‘কোনকিছু’ আছে? এই পৃথিবী, এই মহাবিশ্ব, এই গ্রহ, নক্ষত্র, তারকা, সাগর-মহাসাগর এসব তো সৃষ্টি না হলেও পারতো। কেনো হলো? এর পেছনে রহস্য কি? আপাত এই সাধারণ প্রশ্নটাই যুগ যুগ ধরে ‘অমীমাংসিত’ অবস্থায় থেকে গেছে।

 

স্রষ্টার অস্তিত্ব হচ্ছে নেসেসারি এক্সিস্ট্যান্স কারন গ্রান্ড ডিজাইন স্রষ্টা ছাড়া আসা সম্ভব না। এই ইউনিভার্সের অস্তিত্ব হচ্ছে কন্টিঞ্জেন্ট। কন্টিঞ্জেন্ট কোন কিছু অস্তিত্ব আসতে হলে সেটার পিছনে কজ থাকতে হয়, এবং সেই কজ হচ্ছে স্রষ্টা।


 অধ্যাপক অ্যান্থনি ফ্লিউয়ের দেয়ার ইজ গড বইতের পরিশিষ্টে অধ্যাপক আব্রাহাম ভার্গেস জোরালোভাবে বলেছেন, “আস্তিক-নাস্তিক একটি বিষয়ে একমত হতে পারে; যদি কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে, তা হলে এর আগে অবশ্যই এমন কিছু থাকতে হবে যা সব সময় অস্তিত্বশীল। চিরকালীন অস্তিত্ববান এই সত্তা কিভাবে এসেছে? এর উত্তর হলো, এটা কোনোভাবেই আসেনি। এটা সবসময় অস্তিত্ববান। এখন পছন্দ আপনার, হয় সৃষ্টিকর্তা নয় মহাজগৎ। কিছু একটা সব সময় ছিলো।” [ফ্লিউ দেয়ার আ গডঃ হাউ দা ওয়ার্ল্ড’স মস্ট নটসিয়াস এথিস্ট চেইনজড হিজ মাইন্ড। নিউ ইয়র্ক; হার্পারওয়ান। ২০০৭, পৃষ্ঠা ১৬৫] 


 নভোবস্তুবিদ্যাবিদ হিউজ রস বলছেন: আমাদের এ-বিশ্বজগত ও সময়-এর (time) সৃষ্টির সূচনা হয়েছিলো একসঙ্গে। যদি তাই হয়, তবে এ-বিশ্বজগত সৃষ্টির পেছনে এমন এক সত্ত্বা ‘কারণ’ হিসেবে বিরাজ করছে। যে কিনা আমাদের এ-বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বেও অস্তিত্বশীল ছিল এবং যে আমাদের এ-বিশ্বজগতের ‘সময়-মাত্রা’ (time-dimension) থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও ভিন্ন একটি সময-মাত্রায় বসে কাজ করে যাচ্ছে। স্রষ্টা কী এবং কী নয়—এ ব্যাপারে আমাদের উপলব্ধির জন্য ওই সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বলে যে, স্রষ্টা নিজে এ-বিশ্বজগত নন, না তিনি এ-বিশ্বজগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো স্বত্ত্বা [Hugh Ross, Ph.D., The Creator and the Cosmos, Navpress, 1995, p.76] বিখ্যাত এক্স নাস্তিক দার্শনিক এন্থনি ফ্লিউ বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের শুরু ও শেষ নেই সেটার উপর ভিত্তি করে নাস্তিকতাকে বেশি মানতেন কিন্তু বিগব্যাগ আবিষ্কারের পর তিনি বলেছিলেন বিগ ব্যাং তত্ত্বের উপস্থিতিতে ওই বিশ্বাসের ওপর স্থির থাকা সহজ ও স্বস্তিদায়ক ব্যাপার নয় মোটেও। [Henry Margenau and Roy Abraham Varghese, eds, Cosmos, Bios, Theos, La Salle, IL, Open Court Publishing, 1992, p.241]

 

➤ দার্শনিক মাইকেল রুস ছিলেন নাস্তিক তিনি বলেছিলেন যে, “আপনি যদি স্বীকারোক্তি চান তবে শুনুন, আমি সবসময় স্বীকার করেছি বস্তুবাদ অন্ধবিশ্বাস।” [R.B. Sterwart (ed.), Intelligent Design: Willam A. Dembski & Michael Ruse in Dialogue. P.37]


➤ চোখের চমৎকারিতা দেখে ডারউইন বলেন- চোখ বিবর্তনের দ্বারা এসেছে এমন ধারণা করা হবে,আমি খোলামনে স্বীকৃতি দিচ্ছি,বড় ধরনের হাস্যকর কথা।"[The Origin of Species part-1,p-250], বৈজ্ঞানিক [জাসট্রো] Dr. Robert Jastrow বলেন,“মানুষের চোখ যে দৈবাৎ  সৃষ্টি,বিবরতনের পরিণতি ,এ ধরনের মতকে গ্রহণ করা কঠিন।আর মানুষের বুদ্ধি যে আমাদের অতীত বংশদরদের মগজের অভ্যন্তরে এলোমেলো ভাঙচুরের ফল,এ ধরণের মতকে গ্রহণ করা আরো কঠিন।[The Enchanted Loom: Mind in the Universe ,p-98,100]


➤ “একটা নির্দিষ্ট অনুভূতি দ্বারা তাড়িত হয়েই আমি বলবো যে, এ-বিশ্বজগতের একটা উদ্দেশ্য (purpose) আছে। এ-বিশ্বজগত দৈবক্রমে বা এমনি এমনি অস্তিত্ব লাভ করেনি। অনেকে মনে করেন যে, এ-বিশ্বজগত বরাবরই ছিল ও এর কার্যক্রম বরাবরই চলছে এবং দুর্ঘটনাক্রমে আমরা এর মধ্যে নিজেদের আবিষ্কার করেছি। আমি মনে করি না যে, বিশ্বজগতকে এ-ধরনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবার মধ্যে কোনো উপকারিতা আছে। আমি মনে করি যে, এ-বিশ্বজগত ও বিশ্বজগতের অস্তিত্বের রহস্য অনেক গভীর এবং এ-সম্পর্কে এ-মুহূর্তে আমরা খুব কমই জানি।” [Stephen Hawking, A Brief History of Time: A Reader’s Companion, edited by Gene Stone, 1993, p.142]


➤ কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির একসময়ের নাস্তিক ডঃ চন্দ্র বিক্রমাসিংহ বলেন, “এখন আমরা উপলদ্ধি করি, জীবনের একমাত্র যৌক্তিক উত্তর হচ্ছে সৃষ্টিতত্ত্ব, জীবন কখনোই কোন এলোপাথাড়ি এক্সিডেন্টাল শাফলিং এর ফসল নয়। [ডঃ চন্দ্র বিক্রমাসিংহে, সাক্ষাৎকার, লন্ডন ডেইলি এক্সপ্রেস, ১৪ আগস্ট, ১৯৮১]


বিজ্ঞান জগতে বিশ্বাস


তারপরও কিছু অতিউচ্চ জ্ঞানসম্পন্ন ভাইয়েরা বলে যে বিজ্ঞানে নাকি বিশ্বাস বলতে কিছু নেই, কিন্তু তারা হয়ত এটাও জানে না যে বিজ্ঞানগীরীর প্রথম ধাপটাই বিশ্বাস দিয়ে শুরু হয়। বিশ্বাস মানুষের স্বভাবজাত আচরন, বিশ্বাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অনেক বড় অংশ। সৃষ্টিকর্তা আছে এটা যেমন একটা বিশ্বাস ঠিক তেমনই সৃষ্টিকর্তা নেই এটাও একটা বিশ্বাস। 


➤ “বিজ্ঞান সম্পর্কে মনে করা হয় যে, জ্ঞানের এ শাখা যুক্তি ও প্রমাণ ভিত্তিক এবং এখানে বিনা বিচারে কোনো কিছুই গ্রহণ করা হয় না। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো যে, বিজ্ঞানের যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যেও অন্তর্নিহিত রয়েছে অযৌক্তিক এবং অল্প-যৌক্তিক নানা দিক। যেমন বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক। প্রচলিতভাবে এটা মনে করা হয় যে, বিশ্বাস হলো ধর্মের ভিত্তি, যা বিনা বিচারে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে যদি বিশ্বাসকেও লক্ষ্য করা যায় তাহলে বলব যে, বিজ্ঞানের এ কাঠামোর মধ্যে যুক্তি ও বিশ্বাসের দ্বান্দ্বিক সহাবস্থান রয়েছে।” [গালিব আহসান, বিজ্ঞানের দর্শন; ভূমিকা (ঢাকা: জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ২০১৫)]


➤ এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান লেখক মারগারেট ভার্থেইম বলেন, “আমরা সবাই কিছু-না-কিছু বিশ্বাস করি এবং বিজ্ঞান নিজেও কিন্তু একগাদা বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। শুরুতেই বলা যায়, বিজ্ঞান এই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে, বিশ্বজগতকে আমরা বুঝতে পারি এবং আমাদের উদ্ভাবন ক্ষমতা ও আরও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির ব্যবহারের দ্বারা আমরা শেষমেশ সব জেনে যাব।” [John Brockman (etd.), What We Believe but Cannot Prove; p. 176 (Perfectbound 2006)]


➤ বৈজ্ঞানিক মহলে আরও কিছু ধারণা জেঁকে বসে আছে মেলা দিন হলো। বিজ্ঞানী রুপার্ট শেল্ড্রেক স্বীয় গ্রন্থে এমন দশটি বিশ্বাসকে তালিকাবদ্ধ করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রতিটি বিশ্বাসেরই ব্যত্যয় ঘটেছে, বিপরীতে প্রমাণ মিলেছে। [Rupert Sheldrake, Science Set Free : 10 Paths to New Discovery; introduction (epub version, New York, Deepak Chopra Books 2012)]


➤ বিস্তারিত আলোচনা শেষে গবেষক (যিনি নিজেও বিজ্ঞানের কড়া সমর্থক) নিজেই লিখেছেন, “দার্শনিক আর. জি. কলিংউড ঠিকই বলেছেন : বিজ্ঞান আগে থেকেই অনুমান করে নেওয়া কিছু ধারণার ওপর নির্ভরশীল। একথা বিজ্ঞান ‘ফ্যাক্ট’ নয় বরং ‘বিশ্বাস’-এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে এমনটা বলার সমতুল্য।” [Glenn Borchardt, The Ten Assumptions of Science: Towards a New Scientific worldview; p. 119]


➤ প্রখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক বলছেন “যে-ব্যাক্তি সত্যিকার অর্থেই বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, সে-ব্যাক্তি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করে যে, ‘বিজ্ঞান’ নামক মন্দিরের প্রবেশ পথের তোরণে লেখা আছে: ‘তোমাকে অবশ্যই বিশ্বাসী হতে হবে’। এটি (অর্থাৎ বিশ্বাস) এমন একটা গুণ–যা ছাড়া কোনো বিজ্ঞানী চলতে পারে না।” [Max Planck, Where is science going?, Allen & Unwin, 1933, p.214]


থাক তাহলে আর বেশি প্রমান দেওয়ার চেষ্টা করছি না। দয়া করে আগে এটা পড়ে দেখবেন তাহলে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন বিজ্ঞানে বিশ্বাস বলতে কিছু আছে কিনা সেই সম্পর্কে - বিজ্ঞান ও বিশ্বাস। স্রষ্টায় বিশ্বাস যে সহজজাত সেটা কিছুক্ষন পড়েই প্রমান করছি।

 

শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব, প্রাণ, পানি, বায়ু, মাটি, আগুন,গাছ আপনা আপনি নিজ থেকে সৃষ্টি, বিগব্যাগ, বিগব্যাগ এর মহাবিস্ফোরনের পর প্রায় জিনিস আপনা আপনি সুনির্দিষ্ট বিন্যাসে বিন্যাস্ত হওয়া, ওয়ার্ম হোল, হোয়াইট হোল, প্যারালাল ইউনিভার্স, নিকোলা টেসলা ৩৬৯, টাইম ট্রাবেল (অতিত-ভবিষ্যত দুটোতেই), ডার্ক এনার্জি, ডার্ক ম্যাটার, বিগ ব্যাঙ্গ, কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন, বিগবাউন্স, কনফোর্মাল সাইকেল, স্ট্রিং ইত্যাদি প্র্যক্টিক্যালি ও এবিযেন্স এর উপর ভিত্তি করে প্রমানিত নয়, বরং এগুলা থিউরি বা তত্ত্ব যেটা যৌক্তিক হতে পারে আবার অযৌক্তিকও, সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে, সঠিকও হতে পারে আবার ভুলও হতে পারে তারপরও একদল বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ ও একদল বিজ্ঞানি এসব অলৌকিক আর রূপকথার মত বিষয়ে বিশ্বাস করেন। এই কারনেরই হয়ত অনেক বিজ্ঞানী স্বীকার করেন যে বিজ্ঞানে বিশ্বাসের অস্তিত্ব আছে।

 

এমন বিজ্ঞানীদের আরো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিক্যাল পড়তে চাইলে এটা পড়তে পারেন - আল্লাহর অস্তিত্ব

এই সৃষ্টি দূর্ঘটনায় আসার সম্ভবনা

মহাবিশ্ব সুপকল্পিত। সূর্যের চারপাশে ঘোরা থেকে প্রাণীজগতের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন এমনকি পানিচক্র সকল কিছু সুপরিকল্পিত। প্রোটনের চারপাশে ইলেকট্রন ঘুরে পরমাণু তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনে এ মহাবিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। সূর্যের ultra violate ray থেকে রক্ষা পেতে ওজন স্তর কিংবা ক্রোমোজমে সুশৃঙ্খলা সুপরিকল্পিত মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রমাণ দেয়। বিবর্তনবাদ নারী পুরুষ পার্থক্যের কি ব্যাখ্যা দেয় জানি না। কিন্তু বিষয়টি ইন্টারেস্টিং, ভাবুন নারীর নির্ধারিত স্থানে যৌনিতে ছিদ্র থাকা ও সেই ছিদ্রে ঢোকানোর মতো লিঙ্গ সকল কিছুই যথাযথ যেন কারো সুচিন্তিত সৃষ্টি।
 
আল্লাহর অস্তিত্বের জন্য আপনি প্রকৃতির দিকে তাকালেই হবে। এই প্রকৃতির সব কিছু সেটেল। মানে সবকিছু সুন্দরভাবে শৃঙ্খলবদ্ধ। পশু-পাখি, পিপড়া, মেঘ, পাহাড়, নদী, গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ  ইত্যাদি সব কিছুই সেটেল। মনে হয় যেন সব কিছু পরিকল্পিত ভাবেই হয়েছে। কিছু উদাহরন দিই - 

 সৃষ্টির শুরু থেকেই সুনির্দিষ্ট পরিমানে মহাবিশ্বে চারটা ফোর্স (শক্তি) থাকা - মধ্যাকর্ষন বল, তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, সবল নিউক্লীয় বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল। সেই নির্দিষ্ট পরিমানের থেকে মধ্যাকর্ষন বল ১/১০^৪০ ভাগের এক ভাগও কম বা বেশি হলে জীবন বিকাশে সহায়ক নক্ষত্র যেমন সূর্যের অস্তিত্ব থাকতো না [Paul Devis, Superforce: The Search for a Grand Unified Theory Of Nature; P. 242] 
 
সবল নিউক্লীয় বলের কাজ হলো পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রন কে ধরে রাখা। দেখা গেছে, এর মান মাত্র ৫% এদিক সেদিক হলেই প্রানের উৎপত্তি অসম্ভব হয়ে পড়তো। তাছাড়া সবল নিউক্লীয় বলের ক্ষেত্রে কাপলিং ধ্রুবক এর মান ০.৫% কম- বেশি হলেই প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে পড়তো [John Leslie, Universe; P. 4. 35, Antropic Cosmological Principle; P. 322; H. Oberhummer,  A. Csoto, and  H. Schlattl, "Stellar Production Rate Of Carbon And Its Abundance in the universe, " Science 289 (2000): 88-90]

 বিগ ব্যাং-এর পর বিশ্বজগতের সম্প্রসারণের গতির মাত্রা ছিল ঠিক ততোটুকু—যে মাত্রায় সম্প্রসারিত হওয়া শুরু করলে বিশ্বজগত তার নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ-শক্তির কবল থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তকালের জন্য সুশৃঙ্খলভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে। সম্প্রসারণের গতিবেগ সামান্যতম কম হলে, এ-বিশ্বজগত ধ্বংস হয়ে যেত; আবার গতিবেগ সামান্যতম বেশি হলেও, বিশ্বজগতের সবকিছু বহু আগেই বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেত। [W.R.Bird, The Origin of Species Revisited, Nashville: Thomas Nelson, 1991; originally published by Philosophical Library in 1987, p.405-406]

 “এমন ধারণা মনে স্থান দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা খুবই কঠিন যে, বিশ্বজগতের বিদ্যমান কাঠামো—যা কিনা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনের ব্যাপারেও স্পর্শকাতর—যত্নের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করেই অস্তিত্বে আনা হয়েছে …।” [Paul Davies, God and the New Physics, New York: Simon & Schuster, 1983, p.189]

বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের শুরুতে শক্তির তারতম্যের পরিমান যদি 1/10^60 ভাগের এক ভাগও হতো তবে মহাবিশ্ব চুপসে যেতো অথবা এতো দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতো যে কেনো গ্রহ নক্ষত্রই সৃষ্টি হতোনা। 1/10^60 মানে হলো ১ এর ৬০ টি শূন্য বসালে যে দানবীয় সংখ্যা তৈরি হয়" ব্যাপারটা কিছুটা বুঝার জন্য প্রফেসর জন জেফারসন ডেভিস জার্নাল পেপারে একটি দৃশ্যপটের অবতারণা করেছেন। সুপরিচত পদার্থবিদ পল ডেভিস তার God and the new physics গ্রন্থেও এই দৃশ্যপট উল্লেখ করেছেন [Paul Devis, The Accidental Universe; P. 90-91 (Cambridge University  Press, 1982); Paul Devis God and the New physics; Chapter 13 Balckhole and Cosmic Chaos. (Epub version, penguin Books Ltd, 28 Sep 2006)] 

 একই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখা যায় জর্জ গ্রিনস্টেইনকেও (George Greenstein)। আমেরিকার এই জ্যোতির্বিদ প্রফেসর তার The Symbiotic Universe নামক গ্রন্থে বলছেন: “(বিশ্বজগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা) বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করবার পর, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মনে যে-চিন্তার উদয় হয় তা হচ্ছে: (বিশ্বজগত সৃষ্টির পেছনে) নিশ্চয়ই কিছু অতিপ্রাকৃতিক এজেন্সির (some supernatural agencies)—বা মাত্র একটি এজেন্সির—হাত আছে।”-[দেখুন: Hugh Ross, The Fingerprint of God, 2nd ed., Orange, CA: Promise Publishing Co., 1991, p.114-115]

 বিখ্যাত পদার্থবিদ স্যার ফ্রেড হয়েল (Sir Fred Hoyle) পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রকারান্তরে এ-প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি তার গ্রন্থ The Intelligent Universe-এ লিখেছেন: “একটা টর্নেডোর ধাক্কায় হঠাৎ করে প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ একত্রিত হয়ে একটি বোয়িং-৭৪৭ তৈরী হয়ে যাবার সম্ভাবনা যতোটুকু, দৈবক্রমে পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির সম্ভাবনাও ততোটুকু।” [সূত্র: Nature, 12 November, 1981]

 ১৫০টি অ্যামাইনো এসিডের একটি প্রোটিন তৈরী দূর্ঘটনাক্রমে হওয়ার সম্ভাব্যতা হিসেব করেছেন ১০ এর পরে ১৬৪টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি হয় (তথা ১০১৬৪) এর মধ্যে ১ বার অর্থাৎ ১/১০^168। বিল ডেম্ব্সকি হিসেব করে দেখিয়েছেন আমাদের দর্শনযোগ্য মহাবিশ্বে ১০৮০টি এলিমেন্টারি পার্টিকল আছে, বিগব্যাং থেকে এখন পর্যন্ত ১০১৬ সেকেণ্ড পার হয়েছে এবং দুটো বস্তুর মধ্যে যে কোন বিক্রিয়া প্ল্যাঙ্কটাইম ১০-৪৩ সেকেণ্ড এর চেয়ে কম সময়ে হতে পারে না। এ সবগুলো সংখ্যাকে একত্রিত করলে দাড়ায় ১০১৩৯; অর্থাৎ মহাবিশ্বের বয়স, মহাবিশ্বের গাঠনিক এলিমেন্টারি পার্টিকেলের সংখ্যা এবং পার্টিকেলের মধ্যে বিক্রিয়া হতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সময়কে একত্রে বিবেচনার পরও উপর্যুক্ত প্রোটিনটি তৈরী হওয়ার সম্ভাব্যতা ট্রিলিয়ন ভাগ পিছিয়ে পড়ে। সহজ কথায় উক্ত প্রোটিনটি তৈরী হতে এখন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেকেণ্ড (১০২৫বা ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ বা দশ লক্ষ কোটি কোটি সেকেণ্ড বা একত্রিশ কোটি বিলিয়ন বছর) অতিবাহিত হতে হবে। [Stephen C. Meyer, Signature in The Cell; পাভেল আহমেদ, বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা – ৭: সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ২ বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা – ৮: সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ৩ (ছক্কা বনাম প্রোটিন)]

সবকিছুই যেন আগে থেকেই কেউ সুন্দর মত সেট হিসেবে গুছিয়ে রেখেছে। কে গুছালো? এগুলো সবকিছু এমনি এমনি হয়ে যায়? নাকি এসব নিছক দূর্ঘটনা!! মানুষের জীবনে তো সব কিছু নিজে গুছাতে হয় এমনি এমনি হয় না সব কিছু। বাস্তব জীবনেত আমরা দূর্ঘটনার কোন কিছু সুসজ্জিত হতে দেখি না!! তাহলে এগুলো এমনি এমনি নিজ থেকে কিভাবে হয়ে গেল?? উত্তর শুধু একটাই সব কিছু পিছনে একজন কারিগর অবশ্যই রয়েছে। আমরা যে দুনিয়ায় এসেছি বা আসব তাও আগে থেকেই অনেকটা পরিকল্পনা করা ছিল বলা যায়।
 
বিজ্ঞানীরা প্রমান পেয়েছেন যে শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনের সময়ও একটা পক্ষপাতিত্ব হয়। যে শুক্রানু আগে পৌছায় সেটাই নিষিক্ত হয় না বরং ডিম্বানু তার নিজের পছন্দ মত শুক্রানুকে বেছে নেয় ও সেটার সাথেই নিষেক ঘটায়, যদিও সেই শুক্রানু অন্যগুলার পরে আসুক না কেন। [ , ]

 

তারপরও নাস্তিকরা দুর্ঘটনায় বেশি বিশ্বাসী। তারা মনে করে সব কিছু দূর্ঘটনাবসত হয়ে গেছে, যে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা প্রায় কয়েক ডেসিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। কিছু উদাহরণ দিয়ে বুঝাই তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে আপনাদের। ২০টি বেশ কয়েক ধরনের কালার ও দামের চকলেটের পেকেট এক সাথে হাতে নিয়ে টেবিলের উপর ছুড়ে মারুন ও চেষ্টা করবেন যে যাতে সেগুলা  ‍ছুড়ে মারার পর সেগুলা সমান একটি লাইনে যেয়ে এক সাথে সমান্তরাল ভাবে অবস্থান করে ও একই রঙ্গের গুলো যাতে এক সাথে থাকে ও মূল্যের ক্রমানুসারে অবস্থান করে। কয়েক বিলিয়নবার চেষ্টা করে দেখুন চেষ্টা করে দেখুন তারপর নিজেই চিন্তা করে দেখুন মহাবিশ্বে সবকিছু কিভাবে এই চকলেটের মত দূর্ঘটনার মাধ্যমে আজ বর্তমান অবস্থায় এসে পৌচেছে। আরো জানতে দেখতে পারেন আর্টিক্যাটিভিডিওটি

 

নাস্তিকরা দাবি করে এই মহাবিশ্ব কোন উদ্দেশ্য ছাড়া আপনা আপনি নিজ থেকে শুধু শুধু কোন কারন ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে। অথচ কোরআনে আল্লাহ বলেন, 


আর আমি আসমানসমূহ, যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এ দুটোকে যথাযথ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। [সুরা দুখান আয়াত ৩৮, ৩৯]


যাইহোক, অনেকে বলে বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি তাই স্রষ্টা নেই, আরে বোকা স্রষ্টার অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে পারেনি সেটা বিজ্ঞানের ব্যর্থতা, স্রষ্টার নয়। বিজ্ঞান গত ২০ বছরে অনেক নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করেছে তার মানে কি সেগুলা আগে ছিল না!! অবশ্যই ছিল কিন্তু বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি তাই কেউ জানত না সেগুলারও অস্তিত্ব আছে। এত কিছুর পরও যদি কেউ বলে বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি, তাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই তাহলে এমন বলাটা তার জ্ঞানহীনতা ছাড়া কিছুই নয়।

বিজ্ঞানের অনেকগুলা থিউরি, সূত্র, ফ্যাক্ট, তত্ত্ব দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করা যৌক্তিক প্রমান করা যায়। বিজ্ঞানের আবিষ্কার করা তথ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তা আছে তা প্রমান করা যায় কিন্তু বিজ্ঞান দিয়ে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমান করা যায় না কারন বিজ্ঞানের মুনাফিকি আচরন (পরিবর্তণশীল স্বভাব)। যে বিজ্ঞান নিজেই কোন কিছু আবিষ্কার করে তার উপর স্থায়ী থাকতে পারেনা সে বিজ্ঞান দিয়ে চিরন্তন সত্য সত্বার অস্তিত্ব প্রমান করতে যাওয়া আর ভাঙ্গা স্টিলের স্কেল দিয়ে মাউন্ট এভারেস্ট এর উচ্চতা মাপা একই কথা। কারন উভয় ক্ষেত্রে সেটাকে ব্যবহার করছি সেটাতেই ত্রুটি আছে। এছাড়া বিজ্ঞানের পক্ষে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমান করা আমার মনে হয় না সম্ভব। কারন বিজ্ঞান বেশির ভাগই ফিসিক্যাল আক্সিস্টেন্স বা পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় এমন সব জিনিস আবিষ্কার করতে পারবে কিন্তু স্রষ্টাকে নাহি মানুষের পক্ষে বা তার তৈরি যন্ত্রপাতির দ্বারা দেখা সম্ভব নাহি পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে উপলব্ধি করা সম্ভব। বিজ্ঞানের সীমারেখা ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড, অতি-প্রকৃত বিষয়ে বিজ্ঞান সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। বিজ্ঞানের পক্ষে বেশির থেকে বেশি যা করা সম্ভব তা হল হয় বিশ্বাস করে নেওয়া বা স্বীকার করে নেওয়া যে স্রষ্টা আছে বা স্রষ্টাকে অস্বীকার করা।


বিজ্ঞান শুধুমাত্র ঐসকল বিষয় নিয়ে মতামত দিতে পারে, যেইসব বিষয় পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা তার আছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ টা ৫ ফুট লম্বা টেবিল যে ৫ ফুট, এটা বিজ্ঞান তখনই বলতে পারবে, যখন তার কাছে ফুট এর সংজ্ঞা জানা থাকবে। কিন্তু টেবিলকে মাপতে পারলেও কোন ব্যক্তি এটা বানিয়েছে, বা আদৌ এটা কেউ বানিয়েছে কিনা, কিংবা সে দেখতে কেমন, কি খায়, কি পরে এইসব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারেনা। বিজ্ঞান শুধু বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করে তার বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে জানাতে পারে। কিন্তু বৈশিষ্ট্যের কারণ জানাতে পারেনা। যেমন ২ টা হাইড্রোজেন (H) ১ টা অক্সিজেন (O) এর সাথে মিলে পানি তৈরি করে, কিন্তু কেন পানিই তৈরি করল, আগুন কেন তৈরি করলনা, এই ব্যপারে বিজ্ঞান নীরব। সে শুধু বস্তুর গুনাগুন বা বৈশিষ্ট্য বলতে পারে, ততটুকুই যতটুকু সে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে অবগত হয়। তাই এই সীমিত বিজ্ঞান কে দিয়ে স্রষ্টাকে খুঁজে না পেলেই যে তাকে অস্বীকার করতে হবে, এটা হাস্যকর।

 

যদি সকল তথ্য-উপাত্ত কোনও স্রষ্টার দিকে ইঙ্গিত করেও, তবে তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াই বিজ্ঞানের কাজ! জাগতিক ব্যাখ্যা প্রদানেই বিজ্ঞান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জীববিজ্ঞানী স্কট টড বিখ্যাত সাইন্স জার্নাল Nature-এ প্রকাশিত এক চিঠিতে এই বাস্তবতা স্বীকার করে বলেন, “জগতের সকল উপাত্ত যদি কোনও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্রষ্টার দিকে ইঙ্গিত করে, তারপরও এমন অনুকল্প বিজ্ঞান থেকে বাদ দেওয়া হয়, কারণ এই ব্যাখ্যা প্রকৃতিবাদী নয়। তবে ব্যক্তি হিসেবে কোনও বিজ্ঞানী এমন বাস্তবতাকে সাদরে গ্রহণ করতে পারেন, যা (পদ্ধতিগত) প্রকৃতিবাদের ঊর্ধ্বে।” [Scott C. Todd, A  view from Kansas on that evolution debate; Nature, vol. 401, p. 423 (30 September 1999)] 


“এ-বিশ্বজগতের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা গ্রহণ করে নিতে বিজ্ঞান আমাদের বাধ্য করে না। কিন্তু বস্তুবাদের প্রতি দুর্বলতাই আমাদের বাধ্য করছে বিশ্বজগতের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে–তা সে-ব্যাখ্যা যতোই অযৌক্তিক বা জ্ঞানবুদ্ধি-বিরোধী হোক না কেন। তা ছাড়া, বস্তুবাদ হচ্ছে অ্যাবসলুট (absolute); তাই আমরা কোনো ‘স্বর্গীয় পা’-এর (Divine Foot) চিহ্ন আমাদের ‘দরজা’-র সামনে পড়তে দিতে পারি না।”–(সূত্র: Richard Lewontin, ‘Billions and Billions of Demons’, New York Review of Books, January 9, 1997, p.28)


সহজাত প্রমান


স্রষ্টা থাকার আরো একটি প্রমান হল স্রষ্টার প্রতি মানুষের সহজজাত বিশ্বাস।


 University of Oxford এর Centre for Anthropology and mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin Berrett দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে বলেছেন, “Human beings are natural believers in God.” অর্থাৎ, মানুষ স্বভাবতই ঈশ্বরে বিশ্বাসী। একইভাবে Dr. Olivera petrovich বলেন, “belief in God is not taught but develops naturally” অর্থাৎ, ঈশ্বরে বিশ্বাস শেখানো হয় না কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বিকশিত হয়। Dr. Olivera petrovich সাইকোলজি অব রিলিজিয়নের উপর বিশেষজ্ঞ এবং তিনি একজন নাস্তিক। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে একই মত প্রকাশ করেছেন বিক্ষ্যাত রিচার্ড ডকিন্স। ডেন হেমার দাবী করেন একটি জিন মানব মনে স্রষ্টার বিশ্বাস তৈরিতে আগে থেকেই প্রোগ্রামিং করা থাকে। [রেফারেন্স - ,    ,    ,    ,    ,  ]


ড. ডেবোরাহ কেলেমেনের গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে শিশুরা সহজাত ও প্রাকৃতিক ভাবেই আস্তিক৷ তাদের সহজাত চিন্তাধারা হলো প্রকৃতির নানা ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মনে করা [Journal Of Psychological Science Vol. 15, No. 05 P. 295-301 May 2004; Science and the World’s Religions; vol. 02 (Persons and Groups), p. 217- 219 (Publisher ABC-CLIO , July 2012)] 

 

যুক্তিবিদ ও দার্শনিক অ্যালভিন প্ল্যানটিংগার এর মতে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস পুরোপুরি মৌলিক বা সহজাত একটি বিশ্বাস [Alvin Plantinga, Is Belief in God Properly Basic?; p. 41-51 (Noûs, Vol. 15, No. 1, 1981 A.P.A Western Division Meetings-Mar., 1981)]

 

আসলে প্রকতির সজ্জা দেখে একে কেনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে ----- এমনটা ভাবার প্রবনতা শুধু শিশুদের নয়, পরিণতদেরও দেখা যায়। ধর্ম বিশ্বাসের উদ্ভব সংক্রিয় ও অভ্যন্তরীন এবং তা প্রকৃত পক্ষে স্বতঃস্ফুর্তভাবে শিশুদের মাঝে উদ্ভুত হয়। [The God Issue: We are all Born Believers, New Scientists Magazine, Issue 2856, P. 38-41 (19 March 2012); Science and the World’s Religions; vol. 02 (Persons and Groups), p. 206, 209, 210]


 ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাস্তিক পল ব্লুম তার গবেষনায় জানান ধর্মবিশ্বাস মানব প্রকৃতির অংশ। শিশুরা প্রাকৃতিক ভাবে দেহ-মনের দ্বৈততায় বিশ্বাসী। তার মতে সৃষ্টিতত্ত্ব ও স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্বভাবজাত - গভীরে গ্রথিত। [রেফারেন্স ১]

 

ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ডেবোলোপমেন্টাল সাইকোলজি এর অধ্যাপক নাস্তিক ব্রুস হুডের গবেষনা জানায় ‘অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাস’ জন্ম থেকেই আমাদের মস্তিস্কে গ্রথিত, আর তাই ধর্মবিশ্বাস এক অত্যান্ত শক্তিশালী মানসিক প্রভাবরূপে প্রকাশিত। [রেফারেন্স ২


 এমনকি এ প্রবণতা অবিশ্বাসীদের মাঝেও দেখা যায়।  সাম্প্রতিক সময়ে ডেবোরাহ কেলেমন আরও দুজন গবেষকের সাথে অবিশ্বাসীদের উপর যে গবেষণা পরিচালনা করেছেন তা থেকে এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। The Divided Mind of a Disbeliever : Intuitive Belifs About Nature As Purposefully Created Among Different Groups Of Non Religious Adults শিরোনামে প্রকাশিত গবেষনাপত্রে তিনটি ভিন্ন স্টাডি গ্রুপের উপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই প্রকৃতিকে ডিজাইনড তথা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট হিসেবে দেখার প্রবণতা সহজাত, এর শেকড় গবীরে গ্রথিত [.Jernefelf, E, Canfield C. F. Kelemen, D., The Divided Mind Of a Disbeliever: Intuitive Belifs About Nature as purposefully Created Among Different Groups of Non-Religious Adults. Cognition Vol 140, P. 72-88 (2015)]

 

ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ডেবোলোপমেন্টাল সাইকোলজি এর অধ্যাপক নাস্তিক ব্রুস হুড আরো দেখিয়েছেন ধর্মবিশ্বাসীরাত বটেই এমনকি নাস্তিককেরাও যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসে প্রভাবিত। তিনি বলেন এটাই প্রমান করে যৌক্তিক ব্যাখ্যাহীন অন্ধবিশ্বাস আমাদের মস্তিস্কে গ্রথিত। [রেফারেন্স ২]


স্রষ্টার ধারনাও স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমান


বিজ্ঞান কি এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের "ধারণা" সম্পর্কে জানতে হবে।  


পাশ্চাত্যের আধুনিক দার্শনিক গণিতজ্ঞ এনং বিজ্ঞানী রেনে ডেকার্টের মতে Theory of idea তিন প্রকার। ১. আগুন্তক ধারণা ( Adventitious Idea)  ২. কৃক্রিম ধারণা ( Factitious Idea )  ৩. Innate Idea ( সহজাত ধারণা ) 


আগুন্তক ধারণা ( Adventitious Idea):  আগুন্তক ধারণা যে-সব ধারণা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাহ্য জগৎ থেকে মনো জগতে আসে তাকে আগুন্তক ধারণা (Adventitious Idea) বলে। সহজ ভাষায় বললে, আমারা যা কিছু দেখি,শুনি বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে ধারণা অর্জন করি সেগুলোই আগুন্তক ধারণা (Adventitious Idea)  যেমন এই লেখা আপনি দেখে যে ধারণা বা অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তাই আগুন্তক ধারণা। 


কৃক্রিম ধারণা ( Factitious Idea ):  ভিবিন্ন ধারণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে যে ধারণা আসে তাকে কৃক্রিম ধারণা ( Factitious Idea ) বলে। যেমন, আমরা পাখি দেখি, পাখির ডানা আছে, আকাশে উড়ে। অপরদিকে ঘোড়াকে দৌড়াতে দেখি। এখানে পাখি উড়া, ঘোড়ার দৌড়ানো এগুলো আমাদের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা চিন্তা করতে পারি "পঙ্খীরাজ" চিন্তা করতে পারি। সুতরাং, "পঙ্খীরাজ" হচ্ছে কৃত্রিম ধারণা। 


Innate Idea ( সহজাত ধারণা ): যে ধারনা মানুষের মনের ভেতরের জন্মগত ধারনা। যা অভিজ্ঞতার সাথে প্রপ্ত ধারণার বিপরীত। অর্থাৎ যে ধারণা আমারা জন্মগত তাই সহজাত ধারণা। আমরা যদি বলি স্রষ্টার অস্তিত্ব নাই তাহলে স্রষ্টার ধারণা হচ্ছে কৃতিম ধারণা বা আমাদের কল্পনা। কৃত্রিম ধারণার জন্য Real Case থাকতে হবে, বা বাস্তবে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে হবে যেটা থেকে আমরা কৃক্রিম ধারণা অর্জন করতে পারি।  যেমন, "পঙ্খীরাজ" আবিষ্কার করতে পারি। কিন্তু এই "পঙ্খীরাজ" চিন্তা করার জন্য বাস্তিবে পাখি ও ঘোড়া অস্তিত্বশীল হতে হচ্ছে।  সুতরাং, স্রষ্টার অস্তিত্ব যদি নাই থাকে তাহলে আমরা কিসের ভিত্তিতে চিন্তা করি বা ধারণা করিযে এ স্রষ্টা নেই বা আছে?


যুক্তি ও তার বানানো সৃষ্টি 


যুক্তি অনেক দেওয়া যায়। সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্বের ব্যাপারে স্বীকৃতি প্রদান করে, সত্যায়ন করে, বিশ্বাস করে এবং সাক্ষ্য দেয়। দেখে আসা যাক কোরআনে এ বিষয়ে কি কি বলা হয়েছে, তারপর নিজ থেকে কিছু বলব না হয়। 


 ‘তারা কি ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করে না, যাতে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারে! বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে তাদের হৃদয়।’ (সূরা হজ আয়াত ৪৬)

'তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মদ আয়াত ২৪)

.

 ‘তবে কি তারা লক্ষ্য করে না উটের প্রতি, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আকাশের প্রতি, কীভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে এবং পাহাড়সমূহের প্রতি, কীভাবে তাকে প্রথিত করা হয়েছে এবং ভূমির প্রতি, কীভাবে তা বিছানো হয়েছে’। (সূরা গাশিয়া আয়াত ১৭-২০)

পৃথিবীতে বিশ্বাসী মানুষের জন্যে (বিশ্বাসের) বহু নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। খোদ তোমাদের মাঝেও আছে। তবু কি তোমরা তোমাদের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাবে না? (সূরা যারিয়াত, আয়াত ২০-২১)

.

 নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে, লোকের উপকারী দ্রব্যাদিসহ সমুদ্রে চলাচলকারী জলযানের মধ্যে এবং আকাশ হতে আল্লাহর বর্ষিত সেই পানির মধ্যে যা দ্বারা তিনি পৃথিবীকে- মরে যাওয়ার পর আবার জীবিত করেন এবং তাতে সকল প্রকার জীব-জন্তুর বিস্তারণে এবং বাতাসের গতি পরিবর্তনের মধ্যে এবং আকাশ ও ভূমন্ডলের মধ্যস্থলে নিয়ন্ত্রিত মেঘপুঞ্জের মধ্যে বিবেকসম্পন্ন লোকেদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৪)

.

 নিশ্চয় আল্লাহ শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তিনিই প্রাণহীন থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে প্রাণহীন বেরকারী। তিনিই তো আল্লাহ্‌, কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? (সূরা আনআম, আয়াত ৯৫), আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তিনি ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন; ...। ... তার (গবাদি পশুর) পেটের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা তাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর।  খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহাল আয়াত ৬৫-৬৭)

.

 আর যমীনে আছে পরস্পর পাশাপাশি ভূখন্ড, আঙ্গুর-বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ, যেগুলোর মধ্যে কিছু একই মূল থেকে উদগত আর কিছু ভিন্ন ভিন্ন মূল থেকে উদগত, যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়, আর আমি খাওয়ার ক্ষেত্রে একটিকে অপরটির তুলনায় উৎকৃষ্ট করে দেই, এতে নিদর্শন রয়েছে ঐ কওমের জন্য যারা বুঝে। (সূরা রাদ, আয়াত ৪)

.

 মানুষ তার খাদ্যের প্রতি নজর করে দেখুক এবং চিন্তা করুক, আমিই তো পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ব্যবস্থা করেছি। এরপর জমিনকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করে তাতে খাদ্যশস্য উৎপন্ন করেছি। উৎপন্ন করেছি আঙ্গুর, শাকসবজি আর জয়তুন ও খেজুর। সৃষ্টি করেছি ঘন-নিবিড় বাগবাগিচা, নানা রকম ফলমূল আর তৃণলতা। (সূরা আবাসা, আয়াত ২৪-৩১)

.

তোমরা ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে? সেটা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমরা সৃষ্টি করি? তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি সেটাকে অংকুরিত কর, না আমরা অংকুরিত করি? তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে আমাকে জানাও, তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে ব্যাপারে আমাকে বল, তোমরাই কি এর গাছ সৃষ্টি কর, না আমরা সৃষ্টি করি? (সূরা ওয়াকিয়াহ আয়াত ৫৮,৫৯, ৬৩,৬৪,৬৮,৭১,৭২)

আরে! ঐ আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ, যিনি আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা? (সূরা ১৪ ইবরাহীম, আয়াত ১০)

.

 তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? নাকি তারা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না। তোমার রবের গুপ্তভান্ডার কি তাদের কাছে আছে, না তারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণকারী? নাকি গায়েবী বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখছে? (সূরা আত-তুর, আয়াত ৩৫-৩৭,৪১)
.
 তোমরা কেমন করে আল্লাহকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। (সুরা বাকারা আয়াত ২৮) 
 
হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল। (সূরা হজ্জ আয়াত ৭৩)
 
বিজ্ঞান সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকা একজন মানুষ যদি এই আয়াত গুলো পড়ে কিছুই না বোঝে বা মনে করে এগুলো শুধুই বাণী ছাড়া কিছু না তাহলে নিঃসন্দেহে তার জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। কোরআনেই প্রায় সব যুক্তি উঠে এসেছে তারপরও আমি আলাদা ভাবে নিজ থেকে কিছু কথা বলি।  

একজন নাস্তিক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, একজন রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া কোন রাষ্ট্র সঠিক ভাবে চলতে পারে না। অথচ সে মনে করে একজন নিয়ন্ত্রনকারী বা পরিচালক ছাড়াই এ মহাবিশ্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে। আল্লাহ কোরআনে বলেছে

অবশ্যই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করা মানুষ সৃষ্টি করার চেয়ে বড় বিষয়; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। [সূরা গাফির আয়াত ৫৭]

[১]  বিভিন্ন ধরণের বাস্তব তুষার কনার মাইক্রোস্কোপ দৃশ্য দেখেছেন? সেগুলা মাশাআল্লাহ অসাধারন সুন্দর, অনেক ধরনের ডিজাইনের আছে কিন্তু এগুলার এই ডিজাইনত মানুষ দেয় না তারপরও কিভাবে এই ডিজাইন পেয়েছে বা পায় তারা? 

আমাদের আশে পাশে অনেক উপকারি ঔষদি গাছ ও ফসল আছে তার মধ্যে শুধু কালো জিরার কথাই বলি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, এলার্জি, খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। হাঁপানি ও খিঁচুনি রোগের উপশম এটা, মৃগীরোগ, শিশুদের হৃৎপিন্ডে অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। কালো জিরার উচিলায় দেহের ঘা, ফোঁড়া কম সময়েই সেরে যায়। পারকিনসন্স ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের সুস্থতায় অনেক বড় ভুমিকা পালন করে ও ক্যান্সার উৎপাদনকারী ফ্রির‌্যাডিক্যাল অপসারিত করতে পারে, এছাড়া দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কালিজিরা।কালো জিরা এটি ব্যাপকভাবে অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ, লিভার টনিক, মূত্রবর্ধক, পাচক, অ্যান্টি-ডায়ারিয়াল, ক্ষুধা উদ্দীপক, ব্যথানাশক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ত্বকের রোগে ব্যবহৃত হয়েছে। কালো জিরার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টিক্যান্সার, ইমিউনোমডুলেটর, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, স্প্যাসমোলিটিক, ব্রঙ্কোডাইলেটর, হেপাটোপ্রোটেক্টিভ, রিপাটোপ্রোটেক্টিভ গ্যাস্ট্রোপ্রোটেকটিভ, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-মাইকোটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য। এখন আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখেন এগুলাত প্রাকৃতিক জিনিস, এগুলা মানুষের তৈরি কিছু না তারপরও সামান্য এই কালো জিরার মধ্যে এত উপকারিতা নিজ থেকে কিভাবে আসা সম্ভব!! কালো জিরা কিভাবে জানল প্রাণীদের এই উপকারী গুণগুলো প্রয়োজন?
 
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য ইমাম আবু হানিফা (রহ) ও নাস্তিকের সেই বিখ্যাত ঘটনাই যথেষ্ট! ঘটনাটি এতই প্রসিদ্ধ যে এখানে তার পুণরায় উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন মনে করছি৷ তারপরও যদি কেউ না জেনে থাকেন, তবে ইমাম আবু হানিফা ও নাস্তিক ১  ইমাম আবু হানিফা ও নাস্তিক ২ এই গল্পগুলো পড়ে আসুন৷

[২] মনে করেন একটা লোকের ক্রয় করা একটা দ্বীপ আছে যেখানে কেউ থাকে না। মাঝে মাঝে সে তার পরিবার নিয়ে সেখানে ঘুরতে যায়। তাই সে কিছু গরিব পরিবারকে দ্বীপের দেখা শোনা করার জন্য রেখে সেই দ্বীপে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। সে তাদেরকে বলেছে অপরিচিত কেউ যদি আসে তাহলে তারা যাতে দ্বীপের উত্তর দিকে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখবে। 

একদিন সে আসে এবং দ্বীপের উত্তর দিকে যায় তখন সে দেখে ওখানে কিছু অন্ধ, বধির ও নির্বোধ মানুষকে। তারপর কিছু দুর যাওয়ার পর সে দেখল কিছু বিভিন্ন ধরনের উপাদান পরে আছে যেগুলা দিয়ে কোন স্থপতি বানানো হয়। তারপর আরো কিছু দুর যাওয়ার পরে সে দেখল একটা কাগজ যেখানে কোন প্রাসাদের জটিল নকশা করা। এর পর সে কিছু দূরে একটা প্রাসাদ দেখতে পেল।

তখন সে তার কর্মচারীদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল যে এটা কে তৈরি করল? তাদের মধ্যে একজন বলল সেই মানুষগুলো করেছে। এখানে মানুষগুলো আমাদের প্রকৃতির সাথে মিল। তখন লোকটা বলল বুদ্ধিহীন ও অন্ধ কোনকিছু কিভাবে এত সুন্দর প্রাসাদ তৈরি করতে পারে? তা ত অসম্ভব। আপনি একবার চিন্তা করে দেখুনত আপনি যে লোকগুলোর মত বলছেন প্রকৃতি এসব সৃষ্টি করেছে তা কতটুকু যৌক্তিক। প্রকৃতির কি হাত-পা আছে? চোখে দেখে? বুদ্ধি আছে? তাহলে সে কিভাবে এসব সৃষ্টি করল? আর আপনারাত যা দেখেননা তা বিশ্বাস করেন না তাহলে প্রকৃতিকে কিভাবে বিশ্বাস করেন? 

যাই হোক লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল তখন আরেক জন বলে উঠল আপনি ওই যে দেখছেন উপাদানগুলা সেগুলা আপনা আপনি একত্র হয়ে প্রাসাদ তৈরি হয়ে গেল। তখন লোকটি রেগে বলল উপাদান গুলার কি প্রাণ আছে নাকি যে সেগুলা আপনা আপনি যেয়ে এত জটিল প্রক্রিয়ায় প্রাসাদ তৈরি করবে? এটার সাথে আমাদের পরমানু ও প্রতিপরমানুর মিল রয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব যে কিছু প্রানহীন,বুদ্ধিহীন পরমানু নিজে নিজে একত্র হয়ে এত এত জটিল ও সুন্দর জিনিস তৈরি করবে মহাবিশ্বে? এটা সম্ভব বলে কোন জ্ঞানী ব্যাক্তি মনে করতে পারে না। 

তারপর একজন বলল নকশা অনুযায়ি লোকগুলা উপাদান গুলো দিয়ে প্রাসাদ তৈরি করল নকশাও তারাই তৈরি করেছে। তখন লোকটি ভরকে গেলেন ও বললেন আমাকে কি পাগল মনে হয়? তারপর বললেন লোকগুলোত বুদ্ধহীন তাহলে তারা নকশা তৈরি করল কিভাবে? তারা অন্ধ তাহলে তারা উপাদান দিয়ে প্রাসাদ কি ভাবে তৈরি করল? এই প্রাসাধ তৈরি করার জন্য জ্ঞানসম্পন্ন ব্যাক্তি যে দেখতে পায় যে শুনতে পায় যার শক্তি আছে ও যার সম্পদ আছে অন্তত এমন একজন প্রয়োজন। ঠিক তেমনই মহাবিশ্ব তৈরি করার জন্যও জ্ঞানসম্পন্ন সত্ত্বা যে দেখতে পায় যে শুনতে পায় যার শক্তি আছে ও যার সম্পদ আছে এমন কেউ প্রয়োজন। কারন প্রকৃতি নিজে নিজে কিছু তৈরি করতে পারেনা এবং পরমানু নিজে নিজে এত রহস্যময় ও সুন্দর মহাবিশ্ব তৈরি করতে পারেনা এবং ডিএনএ এর নকশা কখনো কোন প্রাণী তৈরি করতে পারে না। 
 
[৩] জীবন ধারণের জন্য নৈতিকতা অপরিহার্য। আমরা সব সময় ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্রষ্টা যদি নাই থাকে তাহলে ভালো ও মন্দ নির্ণয় করবে কে? 
 
নৈতিক মানদন্ড যদি মানুষ নির্ধারণ করে তাহলে নৈতিকতার কোনো মানদন্ড থাকবেনা। যেমনঃ কোনো সমাজে যদি মানুষ হত্যা করাকে নৈতিক মনে করে বা ধর্ষণ করাকে নৈতিক মনে করে তাহলে সেই সমাজে মানুষ হত্যা করা এবং ধর্ষণ করাটা নৈতিক বলে গণ্য হবে। অন্যদিকে, নৈতিকতা যদি অব্জেক্টিভ হয় তাহলে, কোনটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক সেটা কোনো ব্যক্তির উপর নির্ভর করবেনা। পৃথিবীর সকল মানুষ যদি একমত হয় যে হত্যা করা, ধর্ষণ করা ভালো তবুও এটি মন্দ বলে বিবেচিত হবে। নৈতিকতা যদি বক্তি নির্ধারণ করে তা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করবে। মানুষ যখন নিজের নৈতিকতা নির্ধারণ করবে, তখন প্রশ্ন আসবে অন্য মানুষ কি সেটা মানতে বাধ্য? অবশ্যই না!
 
যদি বলা হয় আইন না মানলে রাষ্ট্র থেকে শাস্তি প্রধান করা হবে তাই মানুষের তৈরি মানদন্ড অন্য মানুষকেও মানতে হবে। কিন্তু কেউ যদি আইনকে কোনোভাবে ফাঁকি দিতে পারে বা আইনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে ক্ষেত্রে এই যুক্তি গ্রহণ করা যাবেনা। আইনকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া এমন ঘটনার প্রমাণ ইতিহাসে হাজার হাজার আছে। কেউ যদি কয়েকশত মানুষকে হত্যা করে আইনকে ফাঁকি দিয়ে মারা যায় তাহলে তার শাস্তি কি হবে? সুতরাং মানুষ কখনোই নিজের নৈতিকতা নির্ধারণ করতে পারেনা। নৈতিকতা নির্ধারক হতে হলে, তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। পার্থিব জীবনে ও মৃত্যুর পরেও তার ক্ষমতা থাকতে হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো একমাত্র সৃষ্টিকর্তার আছে। তাই নৈতিকতার নির্ধারণের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন অপরিহার্য।
 
অনেকে বলে বেশির ভাগ মানুষ যেটাকে ভালো বলবে সেটা ভালো এবং যেটাকে খারাপ বলবে সেটা খারাপ। কিন্তু যখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় সমকামিতা, অজাচার, অবৈধ যৌনাচার কিভাবে বৈধ হয়? পর্দা করা, নেশা না করা, শূকর না খাওয়া, কোরবানী করা, ধর্ম মতে বিচার করা অধৈ কিভাবে হয় নাস্তিকদের কাছে? তখন আবার তাদের সূর পাল্টে যায়। 
 
যে নাস্তিকগণ বলে বেশিরভাগ মানুষ যেটাকে ভালো বলবে সেটাই ভালো তখন তাদেরকে যদি কয়েকটা দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যেখানে সমকামিতা ও অজাচার প্রকাশ্যে বৈধ করা হয়েছে তখন তারা বলে যে কাজ বিশ্বব্যাপি বেশির ভাগ মানুষ বৈধ বলবে সেটাই বৈধ। তখন যদি বলা যায় নাস্তিকরাত অনেক কাজ করে যেগুলো বিশ্বব্যাপি বেশিরভাগ মানুষ অবৈধ বলে তাহলে তারা সেগুলা করে কেন, তখন আবার তাদের সূর পাল্টে যায়। এছাড়া বেশির ভাগ মানুষ যদি হত্যা করাকে বৈধ বলে তাহলে তাকি বৈধ হয়ে যাবে? এই প্রশ্ন করলে আবার নাস্তিকদের সূর পাল্টে যায়। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক শাসকের নাম পাওয়া যায় যারা কোটি কোটি মানুষকে অন্যায় ভাবে হত্যা করেছে। তখনকার আইনে তারা দোষী ছিল না কিন্তু বর্তমানে তাদেরকে দোষী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তখন তারা যে আইনকে নিজের মত করে ব্যবহার করেছিল সেটা থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় নৈতিকতার মানদন্ড যদি মানুষের চিন্তা ধারার উপর ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে পৃথিবীতে নৈতিকতা, ন্যায় বিচার বলতে কিছুই থাকবে না।

আবার অনেকে বলে যে কাজগুলো সামাজিক, বৈজ্ঞানীক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি দিক দিয়ে ক্ষতির তুলনায় লাভ বেশি সে কাজগুলা ভালো এবং যেকাজ গুলোর লাভের তুলনায় ক্ষতি বেশি সেগুলা খারাপ। কিন্তু যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় নামাজ, রোজা, জাকাত, খতনা, কোরবানি, ইসলামে হারাম করা খাদ্য না খাওয়া ইত্যাদিরত সব দিকে লাভ বেশি তাহলে নাস্তিকরা এসবের বিরোধীতা করে কেন? তখন আবার তাদের সূর পাল্টে যায়। যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, পতিতাবৃত্তি, নেশা করা, অজাচার, সমকামিতা, শূকর খাওয়া ইত্যাদিরত লাভের তুলনায় সব দিক দিয়ে ক্ষতি বেশি তাহলে নাস্তিকরা এসবকে কেন সমর্থন করে? তখন আবার তাদের সূর পাল্টে যায়।
 
কিছু মানুষত হিউমেন ডোমেনের উপর নৈতিকতাকে ছেড়ে দেয়। অথচ এটা করলেই সবচেয়ে বড় সমস্যা গুলো দেখা দিবে। কারন সবার মনমানুষিকতা ও নৈতিকতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা এক না। যার কারনে যার কারনে একজনের হিউমেন ডোমেইন যদি কোন কাজকে ভালো মনে করে তাহলে অন্য আরেক জনের হিউমেন ডোমেইন সে কাজকে খারাপ মনে করতেই পারে। যার দরুন সবার জন্য এক নৈতিকতাকে নিধারণ করে আইন তৈরি করা প্রায় অসম্ভবই ধরা যায়। 

এখন যদি কোন দেশে বা কোন স্থানে আইন বলতে কিছু না থাকে। তখন সে যায়গায় নাস্তিক মানুষ নৈতকতা নিয়ে কেন চিন্তা করবে? কেউত তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার মত নেই সেখানে, আবার তারা মনে করে মৃত্যুর পরত মাটিতে মিশেই যাবে, তাহলে চুরি না করে, ধর্ষন না করে, মদ না খেয়ে, ডাকাতি না করে, পর্ণগ্রফিী না দেখে, অজাচারে লিপ্ত না হয়ে, সমকামিতায় লিপ্ত না হয়ে তাদের কি লাভ? এমন যদি চিন্তা করা শুরু করে তাহলেত আর নৈতিকতা বলতে কিছুই থাকবে না।
 
 বাস্তব উদাহরন দিয়ে বলি তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। বিবর্তনবাদীদের একসময়ের নেতা জুলিয়ান হাক্সলি-কে এক টকশোতে মার্ভ গ্রিফিন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল - “Why do people believe in evolution ?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন--  “The reason we accepted Darwinism even without proof, is because we didn’t want God to interfere with our sexual mores.” অর্থাৎ, “প্রমাণাদি ছাড়াই বিবর্তনবাদকে আমরা মেনে নিয়েছি কারণ- আমরা চাই না যে, স্রষ্টা আমাদের যৌন আচার-আচরণের [স্বাধীনতায়] নাক গলাক।”

একসময়ের তুখোড় নাস্তিক লি স্ট্রোবেল তার Case For Faith বইতে লিখেছেন - “ঈশ্বরের ধারণা থেকে পালানোর অজুহাত হিসেবে ডারউইনিজমের আশ্রয় নিয়ে আমি প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলাম, কারণ এর ফলে নৈতিক বাধ্যবাধকতার তোয়াক্কা না করে আমি নিজের জীবনের খায়েশগুলো অকুণ্ঠচিত্তে পূরণ করতে পারবো।”
 
[৪] ধরুন আপনি চাঁদে হাটছেন। এমন সময় পায়ের কাছে একটি Iphone 13 pro পেলেন। যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই ফোন কারা তৈরি করেছে? আপনি বলবেন আমেরিকায় Apple কোম্পানি এটার নির্মাতা। হয়তোবা কোনো মহাকাশচারীর হাত থেকে পড়ে গেছে। কিন্তু এটা কিন্তু ভাববেন না যে চাঁদে উপস্থিত সিলিকন,তামা,লোহা একত্রিত হয়ে নিজে থেকে প্রোগ্রামিং হয়ে IPhone 13 pro তৈরি হয়ে গেছে। 

আল্লাহর অস্তিত্বের জন্য আপনি প্রকৃতির দিকে তাকালেই হবে। এই প্রকৃতির সব কিছু সেটেল। মানে সবকিছু সুন্দরভাবে শৃঙ্খলবদ্ধ। পশু-পাখি, পিপড়া, মেঘ, পাহাড়, নদী, গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ, মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও ধ্বংস  ইত্যাদি সব কিছুই সেটেল। মনে হয় যেন সব কিছু পরিকল্পিত ভাবেই হয়েছে। সবকিছু একটা চেইনের মধ্যে আবদ্ধ করা রয়েছে, কোনটার পর কি হবে না হবে ইত্যাদি।

যারা বলে এসব কিছু দূর্ঘটনা বসত হয়ে গেছে তাদের এসব দূর্ঘটনার বাস্তবতা কতটুকু তা আমি আগেই প্রমান করে দেখিয়েছি। তাই দূর্ঘটনার দোহাই দিয়ে লাভ নেই।

যাইহোক আশা করি আপনারা হয় আস্তিকদেরকে আর অন্ধবিশ্বাসী বলবেন না বা নিজেরা নাস্তিক থাবেন না।
অনেকে আবার বলে থাকেন যে যদি দেখেন মৃত্যুর পরে সৃষ্টিকর্তা নেই তখনত সব কষ্ট বৃথা যাবে। আসলে আমিও আপনাকে একই প্রশ্ন করতে পারি মৃত্যুর পরে যদি দেখেন সৃষ্টিকর্তা আছে তখন কি হবে আপনার? যদি মৃত্যুর পর দেখি সৃষ্টিকর্তা আছে তাহলেত আমি সফল হব ইনশাআল্লাহ যদি না থাকে তাহলেও আমার কিছুই হবে না, কারন সৃষ্টা না থাকলে নাস্তিক যেমন মাটিতে মিশে যাবে আমিও মাটিতে মিশে যাব। আবার আপনি যদি মৃত্যুর পর দেখেন সৃষ্টিকর্তা নেই তাহলে আপনার কিছু হবে না কারন আপনিও মাটিতে মিশে যাবেন, কিন্তু যদি দেখেন সৃষ্টিকর্তা আছে তাহলে কিন্তু আপনাকেই কষ্ট ভোগ করতে হবে। 
 
সম্ভবাবনার সুত্র অনুযায়ি যদি বলি তাহলে, একজন বিশ্বাসীর জন্য এই ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ফলাফলের সেট দুটো – (সীমিত সময় জুড়ে ক্ষতি, তারপর অসীম সময় জুড়ে পুরস্কার) অথবা (সীমিত সময় জুড়ে ক্ষতি, তারপর শুন্যতা)। আবার একজন অবিশ্বাসীর জন্যও সম্ভাব্য ফলাফল দুটো – (সীমিত সময় জুড়ে লাভ, তারপর অসীম সময় জুড়ে শাস্তি) অথবা (সীমিত সময় জুড়ে লাভ, তারপর শুন্যতা)
 
সীমিত লাভের সম্ভাবনার জন্য অসীম সময়জুড়ে শাস্তির ঝুঁকি নেওয়া অযৌক্তিক। এ কারনে সম্ভাব্য ফলাফলের বিবেচনায় গাণিতিক ও যৌক্তিকভাবে “স্রষ্টা আছেন” এই অবস্থান নেওয়াই অধিকতর নিরাপদ।

বিজ্ঞানী ও দার্শনিক যারা সৃষ্টিকর্তা নিয়ে কিছু বলেছেন


কিছু নামধারী নাস্তিকরা বলে বেশির ভাগ বিজ্ঞানী ও দার্শনিক নাকি নাস্তিক ছিলেন। তাদের এই দামি যে কত বড় মিথ্যা তা তারা নিজেরাও হয়ত জানে না, এটো কমন সেন্স এর বিষয় যে যেখানে সব সময় আস্তিকদের সংখ্যা নাস্তিকদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল ও আছে সেখানে আস্তিক বিজ্ঞানীর তুলনায় নাস্তিক বিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিজ্ঞান জগতে বেশির ভাগ মানুষই আস্তিক, কিছু বিক্ষ্যাত ব্যাক্তির নাম নিছে উল্লেখ করলাম -


➤ "ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু, আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ" - আইন্সটাইন। তিনি জিবিত থাকা অবস্থায় এও বলেছিলেন যে তিনি নাস্তিক নন কিন্তু তার মৃত্যুর পর একটা ল্যাটার পাওয়া যায় যেটা থেকে অনেকে ধারনা করে তিনি হয়ত নাস্তিক।


 পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে তা হচ্ছে সর্বকালের মধ্যে দিয়ে বর্তমান সৃষ্টিকর্তার এক বিশাল মহাপরিকল্পনারাই অংশ - হেরনি ওয়ার্ড বিশাল

➤ "সূর্য, গ্রহ এবং ধূমকেতুর এই সবচেয়ে সুন্দর ব্যবস্থা শুধুমাত্র বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী সত্তার পরামর্শ এবং কর্তৃত্ব থেকে এগিয়ে যেতে পারে ... এই সত্তা সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, পৃথিবীর আত্মা হিসাবে নয়, বরং সবার উপরে প্রভু হিসাবে", "অন্য কোনও প্রমাণের অনুপস্থিতিতে, শুধুমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুলিই আমাকে ইশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমান করে।" - আইজাক নিউটন

 আমি সৃষ্টিকর্তা এবং মানবজাতিকে অসন্তুষ্ট করেছি কারণ আমার কাজটি যে মানের হওয়া উচিত তা পৌঁছায়নি। - লিওনার্দো ভিঞ্চি
 
 এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ঈশ্বর এবং এই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের একটি আবশ্যিক গুণ।’ - ম্যাক্স প্লাংক

 বড় নাস্তিক দার্শনিক যিনি পরে আস্তিক হন ও There is a God নামের বই ও আছে তার - অ্যান্টনি ফ্লিউ

 ফ্রান্সিস কলিন্স এক্স এথিস্ট জীনতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তার, The Language of God তার লেখা বই

➤ আলবার্ট আইনস্টাইনকে লেখা তার শেষ চিঠিতে ওয়ারনার হেইজেনবার্গ (পদার্থবিদ এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উদ্ভাবক) লেখেন যে “ আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি এই কারণে যে, প্রভু ঈশ্বর সাব-এটমিক কণাগুলির অবস্থান জানেন, যার মাধ্যমে ঈশ্বর Causality Principle (যে নীতি অনুসারে প্রত্যেক ঘটনার অবশ্যই একটা কারণ আছে) এর গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবেন”।

 “আমি মহান স্রষ্টাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই তাঁর অসীম দয়ার জন্য,যিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন শত শত বছর ধরে লুকায়িত অপার সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করতে।” - গ্যালিলিও গ্যালিলি
 
 বিজ্ঞানের সামান্য জ্ঞান আপনাকে স্রষ্টা থেকে দুরে সরিয়ে নিবে। কিন্তু বিজ্ঞানের গভীর জ্ঞান আপনাকে স্রষ্টার নিকটকর্তী করবে। - ফ্রান্সিস বেকন, ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ

 ‘আমার ইচ্ছা ছিল একজন ধর্মতত্তবিদ হবো, কিন্তু আমি এখন আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে দেখছি জ্যোতির্বিজ্ঞানের মাঝেও আছে ঈশ্বরের অস্তিত্বের মহিমা, কারণ মহাকাশ ঈশ্বরের মহিমা ঘোষণা করে।’ - জোহানেস কেপলার

 লুই পাস্তুর,  ড: ডেভিড, ড: ফ্রান্সিস, এনথনি ফ্লিউক, এর্ভিন শ্র্যোডিঙার, ব্লেইজ প্যাসকেল, ওমর এম ইয়াহী, ফজলুর খান, জন এমব্রস ফ্লেমিং, সালিমুজ্জামান সিদ্দিকী, আব্বাস শাফেঈ,  উইলিয়াম বাকল্যান্ড, আলী জাওয়ান, ডঃ মরিচ বুকাইলি, নিকোলা তেসলা, পল লেমনি, আরনেস্ট ওয়ালটন, নিকোলাস স্টেনো, উইলিয়াম উইশটন, জন হ্যাচিনসন, স্যার রোনালড ফিশার, জর্জ লেমাইত্রি, চার্লস হার্ড টওনেস, ড: আবদুস সালাম, ম্যাক্স প্লাংক, মাইকেল ফ্যারাডে, মার্কস প্লাঙ্ক, জর্জ এগ্রিকোলা, জন উইলকিন্স, কাহিট আরএফ, আইজ্যাক ব্যারো, তাকি আল-দিনা মুহাম্মদ ইবনে মা'রুফ, ফ্রাংক এ্যালেন, রবার্ট মরিস পেজ, ওয়ালটার অস্কার লান্ডবার্গ, থমাস পার্কস, আহমেদ হাসান, আজিজ সানজার, মার্সেলো গ্লিসার, কাজি আজিজুল হক, সেলিম শাহরিয়ার, জাহিদ হাসান, ড.কুদরত-ই-খুদা, ফ্রান্সিস কলিন্স, আরনেস্ট ওয়ালটন, স্যার রোনালড ফিশার, চার্লস হার্ড টওনেস এছাড়া নাম জানা না জানা আরো অনেক যারা সৃষ্টিকর্তাকে মানত ও সেটা সবার সামনে প্রকাশ করত। এখানে শুধু গত ৪/৫ শত বছরের কয়েকজন বিক্ষ্যাত ব্যাক্তির নাম উল্লেখ আছে। চাইলে আরো দেখতে পারেন

মুসলিম বিজ্ঞানী [1]  [2]  [3] , খ্রিষ্টান বিজ্ঞানী [1]  [2]  [3] , ইহুদি বিজ্ঞানী [1] , হিন্দু বিজ্ঞানী [1]

লিখিত দলিল


সৃষ্টিকর্তা আছে এইটা প্রতিটা ধর্মগ্রন্থ পড়লেই সেখানে লিখিত আকারে পাবেন। প্রতিটা ধর্মগ্রন্থে কিছু কথা মিল আছে যেমন সৃষ্টিকর্তা একজন ও কেউ তার সমতুল্য নয়। কিন্তু কয়েকটা ধর্মে বিভিন্ন দেবদেবির মূর্তি পুজা করার কারন তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় মানুষ রূপে এসেছিলেন ও মানুষদেরকে সাহায্য করেছিলেন, আবার অনেক ধর্মে বলা হয়েছে স্রষ্টা উপদেবতাও সৃষ্টি করেছেন।

 

আর কোরআন যে আল্লাহর বাণী সেটা কোরআন পড়লেই বুঝতে পাবেন। কোরআনের কিছু মৌলিক দিক সম্পর্কে বলি যা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে না আসলে পাওয়া যেতনা। আপনি নিজে সেগুলা মিলিয়ে নিতে পারেন।


/ যারা আরবি যানে এমন যেকেউ কোরআনের সাহিত্যমান যে সর্বসেরা ও সব চেয়ে আলাদা এবং এর কোন তুলনা হয়না তা মেনে নিতে বাধ্য হবে আর এটাই কোরআনের ভাষাগত অলৌকিকতা

/ কোরআনের ভবিষ্যত বাণী যা আস্তে আস্তে সত্য হয়েছে বা হচ্ছে

/ ১৪শত বছর আগের কোরআনে বিদ্যমান বৈজ্ঞানীক তথ্য যা বর্তমানের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছে

/ একে অপরের সাংঘর্ষিক ও বিজ্ঞানের স্থায়ী তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এমন আয়াত না থাকা

/ এটাই একমাত্র কিতাব যার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হুবহু মুখস্ত রাখতে পারে মানুষ

/ অন্যতম অলৌকিক দিক হল এর আয়াতগুলোর মধ্যে সঙ্গতি, সমন্বয়, ছন্দময়তা ও অলংকারসমৃদ্ধতা

/ কোরআন সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত গ্রন্থ ও কোন এতে অসংগতি নেই, সৃষ্টির ক্ষতি হয় এমন কোন কিছু নেই

/ ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে ও সর্বসেরা উপদেশ দেওয়া আছে


আপনি এগুলা তখনই দেখতে পারবেন যখন নাস্তিকতা বা ইসলাম বিদ্বেষীর চশমা খুলে একজন প্রকৃত জ্ঞানী অনুসন্ধানকারীর মত খুজবেন। আপনি যখন কোরআনে উপরে বর্ণিত বিষয় খুজতে যাবেন তখন প্রমান পেয়ে যাবেন আল কোরআন আল্লাহর বাণী তখন এটাও প্রমান হয়ে যাবে আল্লাহ আছেন।


শাক্ষি


সৃষ্টিকর্তা আছে তার শাক্ষি সবাই দেয় কিন্তু গ্রহন যোগ্য শাক্ষি শুধু সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত স্পেশাল মানুষ গুলোর, যে মানুষ গুলোকে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি ধর্মে তাদেরকে আল্লাহর নবি ও রাসূল হিসেবে সম্ভোদন করা হয় এবং পৃথিবীতে প্রায় দের-দুই লক্ষ নবি-রাসুল এসেছে এবং তারা সত্যহলে অবশ্যই স্রষ্টা আছে। কোন ধর্মের মানুষ তাদেরকে ফেরেস্তা মনে করে, কোন ধর্মে ইশ্বরের পুত্র বা তার ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তি, তারা যদি সত্য হয় তাহলে স্রষ্টা আছে। কিন্তু এখন তারা নেই তাই তাদের বলে যাওয়া কথা অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না আবার অনেকে তাদেরকেও বিশ্বাস করতে চায় না। এছাড়া গ্রহনযোগ্য শাক্ষি হচ্ছে ফেরেস্তাদের ও যারা মারা গেছে তাদের, কিন্তু তাদের শাক্ষি নেওয়া মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় তাই সমস্যা।

 

আমাদের এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ নাস্তিক ও তারা সবসময় দাবি করে যে সৃষ্টিকর্তা নেই কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কোন ভাবেই প্রমান করতে পারে নি যে সৃষ্টিকর্তা নেই এবং কোন দনি পারবেও না ইনশাআল্লাহ। এই বিষয়ে কিছু বিখ্যাত নাস্তিকদের কথা শুনে আশা যাক। 


➤ ডার্ক এনার্জির ধারণা আবিষ্কারের জন্য ২০১১ সালে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া নাস্তিক প্রফেসর আ্যলক্স ফিলিপ্পেনকো বলেন, "স্রষ্টা আছে কি না বা মহাবিশ্বের কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারেনা।" [scientists Only understand 4% of Universe]


➤ বিখ্যাত সাইন্স ফিকশন লেখক আইজ্যাক আসিমভ ও একই কথা বলে। তিনি বলেন,"স্রষ্টা যে নেই এই ব্যাপারে আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।" [Paul Kurtz (etd.), Isaac Asimov on science and the bible. Free inquiry 2, No 2]


➤ আরেক নাস্তিক পদার্থবিদ প্রফেসর লরেন্স এম ক্রাউস বলেন, "আমি এটা প্রমাণ করতে পারবোনা যে স্রষ্টা নেই।" [Lawrence M.krauss Quotes.BrainyQuote.com.Xplore Inc,2018]

 

➤ এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী বলেছেন, “আমি স্টিফেন হকিংকে খুব ভালো করে চিনি। দর্শনে তার জ্ঞান নিতান্তই অল্প, আর ধর্ম নিয়ে সে কিছু জানে না বললেই চলে। তাই ‘সূত্র আছে বলে স্রষ্টার দরকার নেই’ – তার এমন কথায় কান দেওয়া ঠিক না।” [রয়াল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটেনের শীর্ষ বিজ্ঞানী (নিধর্মী) মার্টিন রিস। THE INDEPENDENT] 


স্টিফেন হকিংক নাস্তিক থাকা সত্ত্বেও  A Brief History of Time গ্রন্থে ১২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “মহাবিশ্বের সূচনা ঠিক এমন (মাপা) কেন হলো সেটার ব্যাখ্যা দিতে চাইলে – এটি এক স্রষ্টার কাজ যিনি আমাদের মতো সত্ত্বাকে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, এমন ব্যাখ্যা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনোভাবে এই সমন্বয়ের সুরাহা করা খুবই কঠিন।”


➤ রিচার্ড ডকিন্স অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পাবলিক ডায়লগে বলেন, "স্রষ্টা নেই এই ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত নই।" [John Bingham,Richard Dawkins; The Telegraph, 24 feb 2012]


সৃষ্টিকর্তা থাকার পক্ষে লক্ষ লক্ষ প্রমান আছে আমাদের চারিদিকে। নাস্তিকদের লজিক মতে চিত্রকর্ম দেখে বুঝা যায় সেটার চিত্রকার আছে, মাটির জিনিস দেখলেই বুঝা যায় সেটার কুমার আছে, কোন কিছুর নকশা দেখলে বুঝা যায় সেটার ডিজাইনার আছে, কোন স্থাপত্য দেখেই বুঝা যায় তার রাজমিস্ত্রি আছে কিন্তু মহাবিশ্বের মত এত রহস্যময় সৃষ্টি নাকি বুঝা যায় না যে এই সৃষ্টির কোন স্রষ্টা আছে। তাই এই সৃষ্টিকে দেখলেই বুঝা যায় এর একজন স্রষ্টা আছে। স্রষ্টা নিয়ে বাদবাকি প্রশ্নের উত্তর পাবে এইটাতে - স্রষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন

Ashraful Nafiz

I am an ordinary Muslim student who is interested in acquiring the beneficial knowledge given by Allah and hopes to spread that knowledge among the people. facebook youtube twitter instagram quora

3 মন্তব্যসমূহ

Would you tell me something

  1. এত কিছু কইলেন, কিন্তু আপনার কল্পনার সৃষ্ট স্রষ্টা যে "আল্লাহ"ই, এই ব্যাপারে তো কিসুই বুঝা গেলো না। হিং টিং ছট'এর কথা কইলেওতো একই দাঁড়ায়! ধুর ভাই, এত মাম্বো জাম্বো কইয়া শুধু ঝামেলাই বাড়াইলেন!

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, কিন্তু আপনি পোষ্টের উদ্দেশ্যেটাই বুঝতে পারেন নি। আমি শুধু স্রষ্টা অস্তিত্ব নিয়ে এখানে আলোচনা করেছি। লিখাটি অবশ্যই বেশ বড় হয়ে গিয়েছে, কিন্তু কোন কিছুই এখানে বেহুদা না বলার চেষ্টা করেছি।

      আর আমার স্রষ্টা যে আল্লাহ সেটার প্রমানত ভাই আমার অন্য আর্টিক্যালগুলো পড়লেই পেয়ে যাবেন। আশা করি সেগুলো পড়লে আর আপনার মাথা গোজামিল পাকিয়ে যাবে না।

      মুছুন
  2. " বিজ্ঞান " বিষয়টি সাধারনভাবে দুই গোত্রের। যার প্রথমটি হল Exact science অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এই গোত্রের বিজ্ঞানের নিয়ম বা ফর্মুলা সমূহ দেশ-কাল-জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে এক সার্বজনীন সত্য। পদার্থবিজ্ঞান,রসায়ন,গণিত এই শ্রেণীর। অক্সিজেনের একটা অনু ও হাইড্রোজেনের দুই অনু মিলিত হয়ে একটি জলের অনু গঠন করে- পৃথিবীর যেকোন
    প্রান্তে একথা সত্য। একটা ইলেকট্রন কনিকার ভর ও চার্জ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সমান। আবার ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি সর্বদা দু-সমকোন। এই জাতের বিজ্ঞান সাবজেক্টিভ নয়,অবজেক্টিভ। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্তিনিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ। হকিং তাই ঠাট্টা করে লিখেছেন, "পদার্থবিজ্ঞান অতি উত্তম বস্তু কিন্তু এটা
    সম্পূর্ণ মূল্যবোধ নিরপেক্ষ"।
    পৃথিবী সূর্যের চতুর্ধারে পরিভ্রমণ করে- একথা বললেন ভিন্ন কাল ও দেশের তিন জ্যোতিরবিজ্ঞানী ।ভারতে আর্যভট্ট (৪৭৬-৫৫০),পোল্যান্ডে কোপার্নিকাস(১৪৭৩-১৫৪৩) এবং ইতালিতে গ্যালিলিও গ্যালিলি(১৫৬৪-১৫৪২)।এটি আধুনিক জ্যোতিরবিজ্ঞানের সূচনা।এরপর নিউটন আবিষ্কার করেন মহাকর্ষ বল।১৯২৭ তে এডুইন হাবল আবিষ্কার করলেন "রেড সিফট"।দেখা গেল এই দৃশ্যমান বিশ্ব মোটেই নিশ্চল নয়,গ্যালাক্সি গুলো অবিশ্বাস্য বেগে পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ।আইনস্টাইন দেখালেন, কাল নামের বস্তুটি স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন নয়,এল স্থান-কালের(space-time)ধারণা।সমান্তরালভাবে,বিঙশ শতকের গোড়ার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিকাশ হলো। এসে গেল হাইজেনবার্গের"uncertainty principle"।পরে আবিষ্কার হয়েছে ব্ল্যাকহোল, পালসার ও কোয়াসার।স্টিভেন ওয়েনবার্গ বলেছেন, "এই ব্রম্ভান্ড যত বুদ্ধিগ্রাহ্য হচ্ছে তত বেশী অর্থহীন মনে হচ্ছে "।
    অন্যদিকে রিচার্ড ডকিন্সের স্বদেশীয় দুই প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন ও আলফ্রেড ওয়ালেস ১৮৫৯ নাগাদ দেখালেন, এই পৃথিবীতে আমাদের চারপাশের প্রাণী ও উদ্ভিদ জগৎ বহু কোটি বছরের ধীরগতি জটিল বিবর্তনের ফল।এই জটিল প্রাকৃতিক পদ্ধতির মনুষ্য-নির্মিত গাড়ির মতো কোন চালক নেই ,এটি স্বয়ংচালিত। জীববিজ্ঞান,পদার্থবিজ্ঞান ও কসমোলজির এতাবৎ পুঞ্জীভূত জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত: এই ব্রম্ভান্ড ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে এক "বিগ ব্যাঙের" দ্বারা সৃষ্টি হয়ে স্বয়ং বিবর্তিত হয়ে চলেছে।এই বিশ্বের কোন সৃষ্টিকর্তার বা পরিচালকের প্রয়োজন নেই,এখানেই "ম্যাজিক অফ রিয়েলিটি "।১৯২৭ সালে বারট্রান্ড রাসেল লন্ডনে তার বিখ্যাত বক্তৃতায় বলেছেন, " প্রাকৃতিক নিয়মগুলোর একজন নিয়ম কর্তা থাকবেই এধারনা প্রাকৃতিক নিয়ম ও মনুষ্যসৃষ্ট নিয়মের মধ্যে গুলিয়ে ফেলার ফল।মানুষী নিয়মগুলো আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছে এভাবে চলুন,ওভাবে চলুন।আপনি সেটা মানতে পারেন,নাও মানতে পারেন। কিন্তু প্রাকৃতিক বিধিগুলো আসলে ভৌত জগতে কীভাবে ঘটনা ঘটে তার বর্ণনা মাত্র ।এদেখে আপনি বলতে পারেন না কেউ তাদেরকে অমন আচরণের নির্দেশ দিয়েছে। যদি ধরে নেয়া যায় সত্যিই কেউ নির্দেশ দিয়েছে, তাহলে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় : ঈশ্বর কেন ঐ নির্দেশগুলোই দিলেন, কেন অন্য কিছু নয়? "
    সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে মানুষের জ্ঞানের দিগন্ত ক্রমশঃ বিস্তৃত হয়ে চলেছে। কৌতুহলী পাঠককে অনুরোধ করবো নীচের বইগুলো পড়ে দেখতে :
    1) Why I am not a Christian- Bertrand Russell, 1927.
    2) The God Delusion- Richard Dawkins/ Bantam Press,2006.
    3) The ancestor's tale-Richard Dawkins/ Weidenfeld & Nicolson,2004.
    4) Magic of Reality-Richard Dawkins,2011
    5)A Universe from Nothing-Lawrence M. Krauss,2012/ Free Press, New york
    ( আঠারোই অগ্রহায়ণ, ১৪২৭ @অ.ম)

    উত্তরমুছুন
নবীনতর পূর্বতন