ইসলামে ব্যভিচার ও ধর্ষন সম্পর্কিত সবকিছুর বিধান

ব্যভিচার করা, ধর্ষন করা ও অপবাদ দেওয়া নিয়ে ইসলামের বিধানঃ

ব্যভিচার করার শাস্তি

 ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্ৰত্যেককে একশত বেত্ৰাঘাত করবে, আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ্‌ এবং আখেরাতের উপর ঈমানদার হও; আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্ৰত্যক্ষ করে। [সূরা আন-নূর আয়াত ২; বলে রাখা খালো যে সূরা নিসা আয়াত ১৫তে নারী যিনাকারীর জন্য দেওয়া শাস্তিটি রহিত করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা]

 নবী ﷺ বললেন যে, ‘আল্লাহ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই মত ব্যভিচারী পুরুষ ও নারীর স্থায়ী শাস্তি নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তা তোমরা আমার কাছ হতে শিখে নাও। তা হলো যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন অবিবাহিত মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তবে তাদেরকে একশ বেত্রাঘাত কর এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে- তবে তাদেরকে প্রথমত একশ- বেত্রাঘাত করবে এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।”’ [সহীহ মুসলিম, ১৬৯০; ‘নাসিখুল কুরআন ওয়াল মানসূখাহ’ ৩২৩-৩২৪ পৃ. ; সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪২৫, ৪৪২৬, ৪৪২৭, ৪৪৪৩; দারেমী ২৩৬৬, ২৩৬৭]

আরো অনেক সনদে পাওয়া যায়, রাসূল এই ভাবে অনেককে শাস্তি দিয়েছিলেন, আদেশ করেছেন, অপরাধী নিজের গুনাহ স্বীকার করে শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। [সহিহ বুখারী, হাদিস ২৬৪৯, ২৭২৫, ৩৬৩৫, ৪৭৬১, ৫২৭০; মুসলিম হাদিস ১৬৯০-৯৯; আহমাদ হাদিস ৪৪৯৮, ১৪৪৬৯, ২২১৫৮, ২২১৯৫, ২২২০৮] 

সমকামিদেরকে হত্যা করতে হবে, রজম করে হতে পারে, আগুনে পুরিয়ে হতে পারে, উচু কোথাও উলটা লটকিয়ে রজমের মাধ্যমে হতে পারে [ইবন আবী শাইবাহ, ২৮৩২৮; বায়হাক্বী: ৮/২৩২; বায়হাক্বী/শু‘আবুল ঈমান, ৫৩৮৯; ইবন মাজাহ, ২৬০৯, ২৬১০; সুনান আবু দাউদ, ৪৪৬২; তিরমিযী, ১৪৫৬; বায়হাক্বী, হাদীস ১৬৭৯৬; হাকিম, হাদীস ৮০৪৭, ৮০৪৯]

ইসলামে সমকামিতা বিষয়ক আলোচনা মূলত পুরুষদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত; ফুকাহাগণ (ইসলামি আইনবিদ) এব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে "নারী সমকামিতার জন্য কোন হুদুদ শাস্তি নেই, কারণ এটি জিনা নয়। তবে একটি তাজির শাস্তি অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এটি একটি পাপ। লেসবিয়ানিজমের শাস্তি

 সা’ঈদ ইবনু সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রা) নবী ﷺ-এর নিকট এমন ব্যক্তিকে ধরে আনলেন, যে ছিল বিকলাঙ্গ ও ব্যাধিগ্রস্ত। তাকে এলাকার এক বাঁদীর সাথে যিনাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন নবী ﷺ বললেন, এমন একটি খেজুরের বড় ছড়া নিয়ে আসো যার মধ্যে ছোট ছোট একশত শাখা রয়েছে এবং তা দ্বারা লোকটিকে একবার আঘাত কর। [ইবনু মাজাহ ২৫৭৪, আহমাদ ২১৯৩৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৯১, সহীহাহ্ ২৯৮৬।]

যিনাকারী যদি অনুতপ্ত হয়, তওবা করে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সুধরে নেই ও ওয়াদা করে যে সে আর এমন করবে না তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে। কারন আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, - “আর তোমাদের মধ্যে যে দুজন এতে লিপ্ত হবে তাদেরকে শাস্তি দেবে। যদি তারা তাওবাহ করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় তবে তাদের থেকে বিরত থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” [সূরা আন নিসা আয়াত ১৬]

 ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিমদের জেনার বিচার করতে হয় তাদের ধর্মের বিধান দ্বারা। তবে সত্য হলো, জেনার ক্ষেত্রে তাওরাত ও কোরআন-হাদিসের বিচার একই। [বুখারী ৩৬৩৫, মুসলিম ১৬৯৯, ইবনু মাজাহ ২৩২৭, মুসলিম ১৭০০, আবূ দাউদ ৪৪৪৭, ৪৪৪৮, আহমাদ ১৭০৫৪, ইরওয়া ২৬৯৫]

ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ার শাস্তি

 আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক। [সূরা আন-নূর আয়াত ৪]

প্রমান করতে পারলে শাস্তি দেওয়া হবে না কিন্তু প্রমান করতে না পারলে শাস্তি দেওয়া হবে। [তাফসির আহসানুল বায়ান, সুরা নুরের ৪ নং আয়াতের তাফসির, ইসলাম ওয়েব]

প্রমান সংক্রান্ত বিষয়

প্রমান পাওয়া না গেলে ধর্ষন বা জিনা কোনটারই শাস্তি দেওয়া যাবে না। [আল-বুখারী, ৪১৭৭; মুসলিম, ১৭১১; শরহে মুসলিম, ১২/৩; মিশকাত হা/১৮]

সা‘দ বিন উবাদাহ হেলাল বিন উমাইয়াহ স্বীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ নিয়ে রাসূল ﷺ এর দরবারে হাজির হন। এমন সময় সূরা নূরের ১০ আয়াত নাযিল হয়। যার ভিত্তিতে তিনি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। তখন রাসূল ﷺ উভয়কে লে‘আন করান এবং বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং বলেন যে, আখেরাতের শাস্তি দুনিয়ার শাস্তির চেয়ে অনেক ভয়াবহ’ [ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নূর ৪ আয়াত]। অর্থাৎ ব্যভিচারের শাস্তি দুনিয়াতে গ্রহণ করলে এটি তার জন্য কাফফারা হ’ত [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮] এবং সে সম্ভবতঃ আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে বেঁচে যেত।

ধর্ষক বা যিনাকারী যদি স্বীকারোক্তি দেয় তাহলে তাকে সে অনুযায়ি শাস্তি দেওয়া হবে। [বুখারী ৫২৭০, ৬৮২৪; মুসলিম, হুদুদ ১৬৯১, ১৬৯২; সহীহ ইবনু হিব্বান ৩০৯৪, ৪৪৪০, ৪৪৩৬, ৪৪৩৭; মুসনাদুল মাউসিলী ৭৪৪৬; মুসনাদুল হুমাইদী ৮৩০]

ইসলামী আইনে যেনার অপরাধ সাব্যস্ত হয় ৪ জন সাক্ষী অথবা স্বীকৃতি অথবা গর্ভবতী হওয়ার মাধ্যমে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেও যেনার অপরাধ সাব্যস্ত হ’তে পারে। কিন্তু শতভাগ সন্দেহমুক্ত নয় বলে এর মাধ্যমে ‘হদ’ আরোপিত হবে না; কেননা সন্দেহের অবস্থায় ‘হদ’ প্রযোজ্য নয়। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়; রাবেতার অধীনস্ত ইসলামী ফিক্বহ কাউন্সিলের ষোড়শ অধিবেশন সিন্ধান্ত, জানুয়ারী ২০০২, মক্কা, ৩য় প্রকাশ, পৃঃ ৩৯০; হেদায়াহ ২/৯৫]

ডিএনএ টেস্ট দিয়ে সর্বোচ্চ বুঝতে পারবেন যে তার স্পার্ম  মেয়ের সেখানে আছে। কিন্তু এর মাধ্যমে বোঝা সম্ভব না যে মেয়ে স্বেচ্ছায় ব্যভিচার করেছে, নাকি ধর্ষন হয়েছে, নাকি মেয়ে স্পার্ম ব্যাংক থেকে স্পার্ম কিনে ইউজ করেছে, এসব। এই কারনে এই পদ্ধতিতে এই সমস্যাটা দেখা যায়। 

ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল অব মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের বক্তব্য অনুযায়ী অপরাধী চিহ্নিতকরণে ডিএনএ টেস্ট নাজায়েজ কিছু নয়। এর উপর ভিত্তি করে তাযির শাস্তি প্রয়োগ করা যায়। সাক্ষী পাওয়া না গেলে শায়খ আসিম আল হাকিম (হাফি) ফরেনসিক টেস্ট বা অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করে ধর্ষককে শণাক্ত করবার কথা উল্লেখ করেছেন। [ , ]

সাধারণ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৪ জন সাক্ষী লাগে। অর্থাৎ অপহরণ না করে বা অস্ত্র না দেখিয়ে শুধুমাত্র বলপ্রয়োগে ধর্ষণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এভাবে ধর্ষণ হয় না। তবে প্রাচীনকালে এভাবে ধর্ষণ হবার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন, জামি তিরমিযিতেই একটি হাদিস দেখা যায় যে একজন নারীকে মসজিদে যাবার সময়ে রাস্তার মধ্যেই ধর্ষণ করা হয়েছিলো। তাকে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়া হয়নি, অপহরণও করা হয়নি। [জামি তিরমিযি, হাদিস ১৪৫৭]

 শায়খ আসিম আল হাকিম (হাফি.) বলেছেন,  “...যদি ৪ জন সাক্ষী পাওয়া না যায় তাহলে কাজি অবশ্যই অন্য পন্থায় প্রমাণের অনুসন্ধান করবেন। যেমন ফরেনসিক টেস্ট অথবা অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করে, যার দ্বারা ঐ নারীকে কে আক্রমণ (ধর্ষণ) করেছে তা প্রমাণ করতে সহায়ক হবে। (অভিযোগকারী) নারীকে বন্দী করা যৌক্তিক নয় এবং ন্যায়বিচার নয় কারণ তাকেই তো আক্রমণ করা হয়েছে।” []

ধর্ষকের শাস্তির বিধান

সরকারি মালিকানাধীন এক গোলাম গণিমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসির সঙ্গে জবরদস্তি করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে তার কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হজরত উমর (রা) ওই গোলামকে কশাঘাত করেন, জরিমানা করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসিটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে তাকে কশাঘাত বা কোন শাস্তি প্রদান করেননি। ’ [সহিহ বোখারি: ৬৯৪৯, মুয়াত্তা মালিক ১৫২২]

 হজরত নাফি (রহ) বর্ণনা করেন, ‘হজরত আবু বকর (রা) আমলে এক ব্যক্তি এক কুমারী মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। লোকজন ধর্ষণকারীকে হজরত আবু বকর (রা) কাছে উপস্থিত করলে সে (ধর্ষক) ব্যভিচারের কথা অকপটে স্বীকার করে। লোকটি ছিল অবিবাহিত। তাই আবু বকর (রা) এর নির্দেশ মোতাবেক লোকটিকে বেত্রাঘাত করা হলো। এরপর তাকে মদিনা থেকে ফাদাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।’ [মুয়াত্তা মালিক]

 হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ধর্ষকের উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তবে ইমাম মালেক -এর মতে, ধর্ষণের অপরাধে ধর্ষকের উপর ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি ‘মুহারাবা’ বা ‘হিরাবাহ’র অর্থাৎ সুরা মায়িদা আয়াত ৩৩ এ বর্ণিত শাস্তি প্রয়োগ করা হবে।

শুধু কোন নারীর দাবির মাধ্যমেই শাস্তি দেওয়া যাবে না যতক্ষন না সেই দাবির পক্ষে প্রমান পাওয়া যায়। যদি উপযুক্ত প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তাকে সূরা মায়েদার ৩৩ নাম্বার আয়াত অনুযায়ি শাস্তি দিবে। যদি ধর্ষন নাও করে কিন্তু নারীকে অপরন করলেও লোকটিকে সেই শাস্তিই দিতে হবে। [আল-বুখারী, ৪১৭৭; মুসলিম, ১৭১১; শরহে মুসলিম, ১২/৩]

ইমাম মালেক (রহ), শায়খ সালমান আল-বাজি (রহ), ইমাম শাফেঈ (রহ), আল-লায়ছ (রহ) ও আলী ইবনে আবী তালিব (রা) এর মতে ধর্ষীতাকে মোহরানা দিতে হবে। আবু হানিফাহ (রহ) ও আল-সাওরী (রহ) বলেন: হাদ্দের শাস্তি তার উপর কার্যকর করা হবে কিন্তু তিনি "যৌতুক" দিতে বাধ্য নন। [আল-মুওয়াত্তা', ২/৭৩৪; আল-মুন্তাহা শরহ আল-মুওয়াত্তা', ৫/২৬৮, ২৬৯]

 অনেক স্কলারগণ বলেছেন, ধর্ষন অনেক ভয়ংকর অপরাধ, এতে নারীর ও তার পরিবারিবারিক জীবনে ও তাদের মানুষিক দিকে অনেক প্রভাব পড়ে যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। যদি ধর্ষন অপহরন ও অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হয় তাহলে ধর্ষক মুহারাবার (জমিনে ফিতনা ফাসাত সৃষ্টি করা, ডাকাতি করা ইত্যাদি) শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। [আল-সারখাসি, আল-মাবসুত ৯/২০১, ইবনে কুদামা, আল-মুগনি ৯/১২৪; আল-হুকম ফি'ল-সাতওয়াল-ইখতিতাফ ওয়া মুশকিরাত, পৃ. ১০৪-১৯২; আততাশরীয়ুল জিনাইয়্যুল ইসলামী ২/৩৭৯-৩৮৫]

এই ঘটনা ঘটলে তখন আর ধর্ষনের জন্য আলাদা করে প্রমান প্রয়োজন নেই, মানে ৪ জন শাক্ষির প্রয়োজন হবে না, তখন হারাবা প্রমানিত হলেই শাস্তি দেওয়া হবে মৃত্যু দন্ড।

 হজরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে হজরত রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হদের শাস্তি দেন। ’ (ইবনে মাজাহ: ২৫৯৮, এই হাদিস দুর্বল কিন্তু এই হাদিসের সাথে সহিহ বোখারির ৬৯৪৯ হাদিস মিল তাই অনেকে এটাকে গ্রহন যোগ্য মনে করেন)

 আলকামা ইবনু ওয়াইল (রহ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় একজন মহিলা নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় একজন লোক তার সামনে পড়ে এবং সে তাকে তার পোশাকে ঢেকে নিয়ে (জাপটে ধরে) নিজের প্রয়োজন মিটায় (ধর্ষণ করে)। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি পালিয়ে গেল। তারপর আর একজন লোক তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। ইতোমধ্যে মুহাজির সাহাবীদের একটি দলও সে স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। যে লোকটি তাকে ধর্ষণ করেছে বলে সে ধারণা করল, তারা (দৌড়ে) গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তাকে নিয়ে তারা মহিলাটির সামনে ফিরে আসলে সে বলল, হ্যাঁ, এই সেই লোক।  তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট তাকে নিয়ে আসেন। তিনি যখন তাকে রজমের (পাথর মেরে হত্যা) হুকুম দিলেন, সে সময়ে তার আসল ধর্ষণকারী উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার ধর্ষণকারী (ঐ লোকটি নয়)। তিনি মহিলাটিকে বললেনঃ যাও, তোমাকে আল্লাহ তা'আলা মাফ করে দিয়েছেন। তিনি (সন্দেহজনকভাবে) ধৃত লোকটির সম্বন্ধে ভাল কথা বললেন। মহিলাটির আসল ধর্ষণকারীর সম্পর্কে তিনি হুকুম করলেনঃ একে রজম কর। তিনি আরো বললেনঃ সে এমন ধরণের তাওবা করেছে, যদি মদীনার সকল জনগণ এমন তাওবা করে তবে তাদের সেই তাওবা কুবুল করা হবে। পুরো হাদিসটি হাসান, তাকে রজম কর বাক্য ব্যতীত। সঠিক বক্তব্য হল তাকে রজম করা হয় নাই। [মিশকাত ৩৫৭২; সহীহাহ ৯০০; আত তিরমিযি ১৪৫৪]

পণ্ডিতগণ সর্বসম্মতভাবে একমত যে ধর্ষককে হাদ শাস্তির শিকার হতে হবে যদি তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ থাকে যে সে হদ শাস্তির যোগ্য, অথবা যদি সে তা স্বীকার করে। কোন ধর্ষীতাকে শাস্তি দেওয়া হবে না যদি প্রমান হয় যে সে প্রকৃত অর্থে জিনাকারী নয় বরং ধর্ষীতা। [আল-ইস্তিদকার, ৭/১৪৬]  

“হুদুদের শাস্তি সাধারণত কঠোর। এগুলো প্রয়োগ করার আইনও নির্মম। অর্থাৎ কোনো অবস্থাতেই তা পরিবর্তন ও লঘু করা যায় না এবং কেউ ক্ষমা করারও অধিকারী নয়। কিন্তু সাথে সাথে সামগ্রিক ব্যাপারে সমতা বিধানের উদ্দেশ্যে অপরাধ এবং অপরাধ প্রমাণের শর্তাবলিও অত্যন্ত কঠোর করা হয়েছে। নির্ধারিত শর্তাবলির মধ্য থেকে যদি কোনো একটি শর্তও অনুপস্থিত থাকে, তবে হদ অপ্রযোজ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ অপরাধ প্রমাণে সামান্যতম সন্দেহ পাওয়া  গেলেও হদ প্রয়োগ করা যায় না। ... এক্ষেত্রে বুঝে নেওয়া উচিত যে, কোনো সন্দেহ অথবা কোনো শর্তের অনুপস্থিতির কারণে হদ অপ্রযোজ্য হয়ে পড়ার অর্থ এই নয় যে, অপরাধী অবাধ ছাড়পত্র পেয়ে যাবে, যার ফলে তার অপরাধ প্রবণতা আরো বেড়ে যাবে; বরং বিচারক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে তাকে দণ্ডগত [তাযির] শাস্তি দেবেন। শরিয়তের দণ্ডগত শাস্তিসমূহ সাধারণত দৈহিক ও শারীরিক। এগুলো দৃষ্টান্তমূলক হওয়ার কারণে অপরাধ দমনে খুবই কার্যকর। ধরুন, ব্যভিচার প্রমাণে মাত্র তিন জন সাক্ষী পাওয়া গেল এবং তারা সবাই নির্ভরযোগ্য ও মিথ্যার সন্দেহ থেকে মুক্ত। কিন্তু আইনানুযায়ী চতুর্থ সাক্ষী না থাকার কারণে হদ জারি করা যাবে না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অপরাধী অবধি ছুটি অথবা বেসুর খালাস পেয়ে যাবে, বরং বিচারক তাকে অন্য কোনো উপযুক্ত দণ্ড প্রদান করবেন, যা বেত্রাঘাতের আকারে হবে।” [তাফসির জালালাঈন, ২য় খণ্ড, সুরা মায়িদাহর ৩৩ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ১১৬]

“যেসব অপরাধের শাস্তির ক্ষেত্রে  হদ প্রয়োগ করা যায় না, এবং যেগুলোর কাফফারা নেই, সেসব ক্ষেত্রে (ইসলামী) আদালত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে বন্দী করে রাখা, কশাঘাত, চপেটাঘাত অথবা কঠোর তিরস্কার করে শাস্তি দেবে। এই শাস্তির প্রকৃতি ও কঠোরতা শাসক, তার সহকারী অথবা কাজির এখতিয়ারে।” [মিনহাজুত ত্বালিবীন - ইমাম নববী (রহ), পৃষ্ঠা ৪৫২]

হাদিসে ১০ বেত্রাঘাতের চেয়ে বেশি তাযির শাস্তি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হাদিস ৬৩৮৪] এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ) থেকে একটি মত আছে যে ১০ বেত্রাঘাতের বেশি বেত্রাঘাত তাযির হিসাবে করা যাবে না। কিন্তু এর বিপরীতে অন্য ৩ ইমাম থেকে অভিমত আছে যে তাযির শাস্তি হিসাবে এর থেকেও বেশি বেত্রাঘাত করা যাবে। এমনকি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ) থেকেও তাযির হিসাবে ১০ বেত্রাঘাতের বেশি বেত্রাঘাতের আরেকটি অভিমত পাওয়া যায়। 

এই হাদিসের একটা নির্দিষ্ট ব্যাক্ষ্যা করেছে, সাহাবিদের আমল রয়েছে সেগুলার উপর নির্ভর করেই স্কলাররা ১০ বেত্রাঘাতের বেশি ৩০০ পর্যন্ত বেত্রাঘাত করাকে জায়েজ বলেছেন। [ফাতহুল বারী- ইবন হাজার আসকালানী, ১২/১৮৫; বায়হাকী, জাইলাঈ, ৩/৩৫৪; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হুদুদ, ১৭০৭;  সুনান আবু দাউদ, কিতাবুল হুদুদ,  ৪৪৮১;   , ২ , , ]

"...হত্যার দ্বারা তা‘যীর শাস্তি দেওয়া বৈধ কিনা? ইমাম মালিক (রহ) এর মতে বৈধ। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.-এর একদল অনুসারী ও ইমাম শাফে‘ঈ (রহ) নীতিগতভাবে এ মত সমর্থন করেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে মতভেদও আছে। ..... তা‘যীর শাস্তি হিসেবে অপরাধীকে হত্যা করা যদি অত্যাবশ্যক হয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে হত্যা করা ব্যতীত অন্য কোনো উপায় না থাকে, এমতাবস্থায় বিশুদ্ধ বিবেচনা মতে হত্যা করা বৈধ। সুন্নতে নববী থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। [শায়খ ড. আব্দুল কারীম যাইদানের ‘ইসলামী শরী‘আতে শাস্তির বিধান’গ্রন্থে 'তা‘যীর হিসেবে হত্যা করা' অনুচ্ছেদ]

হাদীসে বিভিন্ন কারনে শাস্তি হিসেবে হত্যা করাকে বৈধ করেছেন, যেগুলাতে সাধারনত হত্যা করার শাস্তির বিধান নেই। [মুসলিম ১৮৫২, ইরওয়া ২৪৫২, ইসলামী শরী‘আতে শাস্তির বিধান , কিতাবুস সুন্নাহ ]

রাসুল(ﷺ) এর বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ হাদিসের উপর আমল করে ধর্ষকদের শাস্তি দিতেন। তাঁদের মতে, যে নারীকে জোরপুর্বক জিনায় বাধ্য করা হয়েছে (ধর্ষিতা) সে হদমুক্ত (জিনার শাস্তিমুক্ত)। [দারসে তিরমিযি – মুফতি তাকি উসমানী, ৪/৩৮৬]

অমুসলিমদের মধ্যে অনেকেই মনে করে ইসলামে ধর্ষিতাকেও শাস্তি দেওয়া বিধান রয়েছে কারন ব্যভিচারকারী উভয়কে শাস্তির বিধান তাই। শুধু অমুসলিম নয় মুসলিমদের মধ্যেও অনেকে এই ধারনা পোষন করে। তাদের জন্য নিচের দলিল গুলা অনেক প্রয়োজনিয় ও উপকারি হবে আশা করি

ধর্ষিতার জন্য বিধান

 যে নিরূপায় অথচ নাফরমান এবং সীমালংঘনকারী নয় তার কোন পাপ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা বাকারা, আয়াত ১৭৩]

 ইবনু ‘আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেনঃ আল্লাহ্ আমার উম্মাতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃতকাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। [ইবনু মাজাহ ২০৪৫, মিশকাত ৬২৮৪, রাওদুন নাদীর ৪০৪, ইরওয়াহ ৮২]

সুতরাং ধর্ষীতাকে কোন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে না কিন্তু ধর্ষীতাকে অবশ্যই নিজের আত্মরক্ষা করার সম্পূর্ণ চেষ্টা করতে হবে। যেখানে সে ধর্ষনের স্বীকার হতে যাবে সেখানে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে মানুষদের জানানোর চেষ্টা করতে হবে, এতে করে তার উপর যিনার দোষও আসবে না এবং সে ধর্ষনের হাত থেকেও বাচঁতে পারে। [আল-ইস্তিদকার, ৭/১৪৬]  

রাসুল ﷺ এর বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ হাদিসের উপর আমল করে ধর্ষকদের শাস্তি দিতেন। তাঁদের মতে, যে নারীকে জোরপুর্বক জিনায় বাধ্য করা হয়েছে (ধর্ষিতা) সে হদমুক্ত (জিনার শাস্তিমুক্ত)। [দারসে তিরমিযি – মুফতি তাকি উসমানী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮৬]

 আলকামা তার পিতা ওয়াযেল থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী মুহাম্মাদের যুগে জনৈক মহিলা সালাত আদায়ের জন্য গমনকালে একজন পুরুষের জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। সে মহিলা চিৎকার দিলে, পরে তার পাশ দিয়ে মুহাজিরদের একটি দল গমনকালে সে মহিলা তাদের বলে, অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ কাজ করেছে। তারপর তারা গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরে আনে, যার সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে, সে-ই এরূপ করেছে। এরপর তারা সে ব্যক্তিকে উক্ত মহিলার কাছে উপস্থিত করলে, সেও বলে হ্যাঁ। এই ব্যক্তিই এ অপকর্ম করেছে। তখন তারা সে ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ এর নিকট নিয়ে যায়। মুহাম্মাদ যখন সে ব্যক্তির উপর শরীআতের নির্দেশ জারী করার মনস্থ করেন, তখন মহিলার সাথে অপকর্মকারী ব্যক্তি দাড়িয়ে যায় এবং বলে ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি -ই অপকর্ম করেছি। তখন মুহাম্মাদ সে মহিলাকে বলেন তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমার অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন। 

তারপর ভুলভাবে ধরে আনা ব্যাক্তির সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় ও প্রকৃত ধর্ষকের শাস্তি নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ আছে, কেউ বলেছে তাকে রজম করে হত্যা করা হয়, কেউ বলেছেন সে ক্ষমা চায় ও ভালো হয়ে যাবে বলা তাকে ক্ষমা করা হয় কেউ বলেছে তাকে অন্য শাস্তি দেওয়া হয় [তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, দন্ডবিধি অধ্যায়]

 ইমাম আহমাদ একটি হাদিস উল্লেখ করেন যে হাদিসটি যুহরি বর্ণনা করেছেন কাসেম বিন মুহাম্মদ থেকে তিনি উবাইদ বিন উমাইর থেকে। এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কিছু লোককে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল। সে ব্যক্তি মেহমানদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। তখন সে মহিলা তাকে পাথর ছুড়ে মারেন। যার ফলে লোকটি মারা যায়। সে মহিলার ব্যাপারে উমর (রা) বলেন: আল্লাহর শপথ, কখনই পরিশোধ করা হবে না অর্থাৎ কখনোই এই নারীর পক্ষ থেকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা হবে না। 

কারণ যদি সম্পদ রক্ষার্থে লড়াই করা, সম্পদ খরচ করা, ব্যবহার করা জায়েয, তাহলে কোন নারীর তার আত্মরক্ষার্থে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাযত করতে গিয়ে, যেনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে  লড়াই করা সম্পদ রক্ষার লড়াই এর চেয়ে অধিক যুক্তিপূর্ণ। সুতরাং সে নারীর যদি আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা দুর্বৃত্তকে সুযোগ দেয়া হারাম। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা না করাটাই তো সুযোগ দেয়া। নারী যদি আত্মরক্ষার্থে ধর্ষনের চেষ্টাকারী পুরুষকে হত্যা করে তাহলে এতে নারীটিকে কোন প্রকার শাস্তি দেওয়া হবে না। [আল-মুগনি (৮/৩৩১); আল-মুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ (৫/৪২-৪৩)] 

উমর (রা) এর নিকট এক মহিলাকে আনা হল যে মহিলা যেনা করেছে। তিনি তাকে জিজ্ঞসাবাদ করলেন: মহিলাটি দোষ স্বীকার করল। উমর (রা) তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন আলী (রা) বললেন: এ নারীর কোন ওজর থাকতে পারে। এ কথা শুনে উমর (রা) মহিলাটিকে বললেন: কেন তুমি যেনা করেছ? মহিলাটি বলল: আমি এক লোকের সাথে একত্রে পশু চরাতাম।তার উটপালে পানি ও দুধ ছিল। আমার উটপালে পানি ও দুধ ছিল না। আমি পিপাসার্ত হয়ে তার কাছে পানি চাইলাম। সে অস্বীকার করে বলল- আমি আমাকে ভোগ করতে দিলে সে পানি দিবে। আমি (তার প্রস্তাব) তিনবার অস্বীকার করলাম।এরপর আমি এত তীব্র পিপাসা অনুভব করলামযেন আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে। তখন আমি সে যা চায় তাকে তা দিলাম। বিনিময়ে সে আমাকে পানি পান করাল। তখন আলী (রা) বললেন: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)। 

“অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩] 

[আত-তুরুকুলহুকমিয়্যা” গ্রন্থে ১৮ পরিচ্ছেদ]

অনেকে ধর্ষনের শিখার হয়ে গর্ভবতি হলে ভ্রুন হত্যা করার চিন্তা করে বা চেষ্টা করে। কিন্তু যিনা, ধর্ষন, আর বৈধ ভাবে যেভাবেই গর্ভে সন্তান আসুক না কেন, আল্লাহ ও তার রাসূল গর্ভপাতকে হারাম করেছে, কিন্তু শর্ত দেন নি যে তখন করা যাবে বা তখন করা যাবে না। তাই সব ক্ষেত্রে বিধান সমান, এতেত সন্তানের কোন দোষ নেই। তাই গর্ভপাত করা জায়েজ নেই। [কিতাব ফাতওয়া আল সাবাকাত আল ইসলাম খন্ড ১৩, পৃ. ৯২০১, ফতুয়া নং ৫৭৬০৩] 

অবশ্যই কোন ওজরের কারনে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগ পর্যন্ত গর্ভপাত করা জায়েজ, এখন কতদিন পর্যন্ত সময়টা সেটা নিয়ে স্কলারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে ১২০ দিনের আগ পর্যন্ত [আদ-দুররুল মুখতার ৬/৪২৯; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫/৪১১-৪১২; ফতাহুল কাদির ৩/৪০১], কারো মতে ৪০ দিনের আগ পর্যন্ত [আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল বুহুসিল ইলমীয়াহ ওয়াল ইফতা ২১/৪৫০] কিন্তু এখানে সবাই একমত যে কোন শক্তিশালি ওজর থাকতে হবে, না হয় সেটা জায়েজ হবে না। [আদ-দুররুল মুখতার ৬/৪২৯; আল-শারহুল কাবীর ২/২৬৬; আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা ২/৫৭; আল-ফাতাওয়া আল-জামিআ ৩/১০৫৫]  

পশুর সাথে ও মাহরামদের সাথে ব্যভিচার

“আমাকে রাসূল ﷺ এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে সঙ্গম করেছিল। রাসূল (সা) আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে”। [আবু দাইদ ৪৪৫৬; ইবন মাজাহ, হাদীস ২৬৫৬ - সহিহ]

আবু বুরদাহ (রা) মতান্তরে হারেস ইবন আমের (রা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে পাঠিয়েছেন এমন লোকের কাছে যে তার পিতার মৃত্যুর পরে পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করেছে- যেন তাকে হত্যা করা হয় এবং তার যাবতীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। [আবু দাউদঃ ৪৪৫৭, মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৯৭, তিরমিযীঃ ১৩৬২, ইবন মাজাহঃ ২৬০৭ - সহিহ] 

পশুকামিতা সংক্রান্ত মহানবী ﷺ থেকে পাওয়া একটা হাদিসও সহিহ নয়। পশুর সাথে ব্যভিচার করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না বরং পশুকে হত্যা করতে হবে এই সংক্রান্ত সকল হাদিসই যয়িফ। তাই সাধারনত এই হাদিসের উপর আমল করে আইন করা হয় না।

 ইবনু আব্বাস সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, পশুর সঙ্গে সঙ্গমকারী হাদ্দের (মৃত্যুদন্ডের) আওতাভুক্ত নয়। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, আতাও এরূপই বলেছেন। হাকাম বলেন, আমি মনে করি তাকে বেত্রাঘাত করা উচিত; কিন্তু তা হাদ্দের সীমা (একশো বেত্রাঘাত) পর্যন্ত পৌঁছা উচিত নয়। হাসান বাসরী বলেন, সে যেনাকারীর সমতুল্য। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, আসিম কর্তৃক বর্ণিত হাদীস আমর ইবনু আবূ আমরের হাদীসকে দুর্বল প্রমাণিত করে। [আবু দাউদ, ৪৪৬৫ - সহিহ]

পশুকামিতার শাস্তি সংক্রান্ত ২/৩টা মত পাওয়া যায়। সেগুলো বিস্তারিত পড়তে চাইলে এখানে ভিজিট করে পড়ে দিতে পারেন - ইসলামে পশুকামের শাস্তি - ফ্রম মুসলিমস্

Ashraful Nafiz

I am an ordinary Muslim student who is interested in acquiring the beneficial knowledge given by Allah and hopes to spread that knowledge among the people. facebook youtube twitter instagram quora

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Would you tell me something

নবীনতর পূর্বতন