যয়নব (রা) কে বিয়ে সম্পর্কে অভিযোগের জবাব

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা মিথ্যা প্রচার না করে থাকতে পারে না। অনেক ইসলামবিদ্বেষী আছে যারা ইসলামের নামে অনেক অপপ্রচার করে থাকে, যার কারণে আমাদের মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়। তার মধ্যেই কিছু অপপ্রচারের খণ্ডন করব এই লেখাটিতে।

Table of Contents

{tocify} $title={Table of Contents}

মহানবী (সা) নিজের পুত্রের বউকে বিয়ে করেছিলেন কেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে বলব যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে বা অপপ্রচার করে তারা ইসলাম সম্পর্কে তেমন কোন ধারণাই রাখে না। মহানবী ﷺ এর আপন কোন পুত্র জীবিত ছিল না এবং উনার পালক পুত্রের মধ্যে একজন ছিলেন যায়েদ বিন হারেসা [1]। মহানবী ﷺ যায়েদ (রা) এর তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকেই বিয়ে করেছিলেন। জাহেলি যুগে পালক পুত্রকে নিজের ঔরসজাত পুত্রের মতো মনে করা হতো [2]। কিন্তু ইসলামে পরবর্তীতে সেই প্রথা বাতিল হয়ে যায় এবং ইসলামে রক্ত সম্পর্ক নেই এমন পালক পুত্রের বউ মাহরামের অন্তর্ভুক্ত না। [3] এই প্রথা বাতিল হওয়ার পর মহানবী ﷺ যায়েদ (রা) কে নিজের পুত্র বলে সম্বোধন করতেন না বরং ভাই ও বন্ধু বলে সম্বোধন করতেন। [4] এছাড়া কিছু রেওয়ায়েতে দেখা যায় যায়েদ (রা) ছিল মুহাম্মাদ ﷺ এর চেয়ে মাত্র ৫ বছরের ছোট [5],মতান্তরে ১০ বছর। আপনারাই চিন্তা করুন তাদের মাঝে কীভাবে পিতা-পুত্রের আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হতে পারে?

কিছু বিষয় বলে রাখা ভালো, পোষ্য সন্তানের জন্য লালনকারীদের সম্মানার্থে মা-বাবা ডাকা জায়েজ, তবে তা অনুত্তম ও অনুচিত। একইভাবে তারাও সন্তানকে স্নেহ করে ছেলে-মেয়ে ডাকতে পারবে। তবে এটা মনে করার সুযোগ নেই যে পালক নেওয়ায় সন্তানের আসল মা-বাবা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছেন। পালক নেওয়া মানে এই নয় যে সে প্রকৃত পুত্র বা কন্যা হয়ে গেছে। পালক নেওয়া সন্তান উত্তরাধিকার পাবে না, প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের সাথে ননমাহরাম হিসেবেই চলাচল করতে হবে। চাইলে শিশু অবস্থায় তাদের দুধ পান করালে তার সাথে দুধ সম্পর্কিত সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে তখন আর নন মাহরামের মত বিবেচনা করতে হবে না। [6]

নবীর আদেশেই মহানবির ফুফাত বোন জয়নব (রা) ও মহানবির পালক পুত্র যায়েদ (রা) বিবাহ করেছিলেন কিন্তু তাদের মধ্যে তেমন মিল ছিল না, কারণ প্রথমে জয়নব (রা) একজন আযাদকৃত দাসকে (যায়েদ (রা)) বিয়ে করতে চাননি। [7] পরে আস্তে আস্তে হজরত যায়েদ (রা) ও জয়নাব (রা) এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয়। পরে জায়েদ (রা) রাসুলের কাছে বারবার জয়নাবকে তালাক দেবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। রাসুল ﷺ বিয়ে ভাঙ্গতে নিষেধ করেন [8]

পরবর্তীতে নবী ﷺ এর পালক পুত্র যায়েদ (রা) নিজ ইচ্ছায় নিজের স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহশ (রা) কে তালাক দিয়েছিলেন। তারপর মহানবী ﷺ নিজের পালক পুত্রের তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে আল্লাহর আদেশে সমাজের প্রচলিত পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করতে না পারার কুসংস্কার দূর করার জন্য বিয়ে করেছিলেন। [9] এবং স্বয়ং আল্লাহ তা”লা সাত আসমানের ওপরে বিয়ে দিয়েছেন মহানবী ﷺ ও জয়নব (রা) কে [10]

এখন কথা হচ্ছে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির একজন পূর্ণ বয়স্কা নারীর উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হল তাহলে এটা নিয়ে এত সমস্যা কেন ভাই? যায়েদ (রা) নবী ﷺ এর প্রাক্তন গোলাম থেকে এডপট করা পুত্র ছিলেন যার সাথে তার কোন রক্ত সম্পর্কও ছিল না, তারপর যায়েদ (রা) জয়নব (রা) কে তালাক দিয়েছিলেন, এছাড়া যায়েদ (রা) ও এ বিয়েতে সমস্যা ছিল না। তাহলে অন্যদের এ নিয়ে এত সমস্যা থাকার কি আছে? নাস্তিকরাইতো প্রচার করে উভয়ের সম্মতিতে সব কিছুই জায়েজ! তাহলে এখানে কি সমস্যা? এটাতো আরো হালাল ভাবে বিয়ে ছিল, নাস্তিকদের মতো তো ব্যভিচার ছিল না সেটা!

যারা এই বিষয় নিয়ে এত নাক তোলে বা চুলকানি দেখায় তারা যেখানে সেচ্ছায় নিজের আপন রক্তের মা, বোন, চাচি, মামি, খালা, ফুফু, দাদি, নানি, মেয়ে, ভগিনী, ভাতিজি ইত্যাদি নারীদের সাথে সম্মতিতে অবৈধ সম্পর্ক করাকে অন্যায় মনে করে না, সেখানে মহানবীর বিয়েটাকে কীসের ভিত্তিতে অন্যায় বা অনৈতিক বলে? অথচ মহানবীর আপন পুত্র নয় বরং পালক পুত্রের বউ (পালক পুত্র প্রথাও বাতিল) যে কিনা আবার মহানবীর কাজিন বোন কিন্তু কোন দিক দিয়ে নবীর মাহরাম ছিলেন না এমন নারীকে তারা উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে করেছিলেন যা এই নামধারী ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী নাস্তিকদের অবৈধ কাজগুলোর সাথে বিন্দু মাত্রও মিলে না। তারপরও তারা কোন নৈতিকতা ভিত্তিতে এটার বিরোধিতা করে আমার জানা নেই, তারা কুসংস্কার বলে অনেক কিছুকেই বাদ করে দেয় এই ক্ষেত্রে পালক পূত্রের প্রথা আর তাদের কাছে কুপ্রথা থাকে না, এই ক্ষেত্রে তারা পালক পুত্রকে আপন পুত্র বানিয়ে ফেলছে! তাদের এসব ভণ্ডামি যে আর কত দিন চলবে আল্লাহই ভালো জানেন। শুধু শুধু ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার করার বাহানা বের করার জন্য বৈধ জিনিসকে তারা গোঁজামিল দিয়ে অবৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করে অথচ তার থেকেও জঘন্য অবৈধ কাজ তারা করে।

ইসলামে পালক পুত্রের বিধান বাতিল করে দিয়েছেন আল্লাহ যার কারণে মহানবী ﷺ নিজের পালক পুত্রকে (যায়েদ) আর নিজের পুত্র বলে সম্বোধন করতেন না। এরপর থেকে তিনি (নবি) তাকে নিজের ভাই বা বন্ধু বলেই সম্বোধন করতেন। যেহেতু পালক পুত্রের বিধান বাতিল হয়ে গিয়েছে, সেহেতু সাহাবি যায়েদ আর মহানবী ﷺ এর পুত্র নন। অথচ যায়েদ মহানবীর আপন তো দূরের কথা, সৎ তো দূরের কথা, ভাগিনা, ভাতিজা তো, নাতি তো দূরের কথা, দূর দূরান্তের কোন রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয়ও ছিলেন না। আর এমন একজনের তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করাত কোন দোষের কিছুই দেখছি না। কারণ যে মহানবীর পুত্রই না, তার স্ত্রী আর কীভাবেই বা মহানবীর পুত্রবধূ হয়!  

আপনাদের ধর্মে হয়ত পলক পুত্রের বিধান থাকতে পারে যার কারণে এত নাক চিটকাচ্ছেন, কিন্তু এতে কিছু যায় আসে না কারণ বর্তমানে কারণ পালক পুত্রের প্রথা (পালক পুত্রকে নিজের প্রকৃত পুত্রের ন্যায় ভাবা, উত্তরাধিকার দেওয়া, মাহরাম সম্পর্ক মনে করা ইত্যাদি) আমাদের মুসলিমদের কাছে একটা জাহিলিয়্যাতি বিধান ছাড়া কিছুই না।

তথ্যসূত্রঃ

[1] তারিখে তাবারী, ৩৯/৯

[2] বুখারী ৪৭৮২; মুসলিম ২৪২৫

[3] সুরা আহযাব আয়াত ৪-৫, বুখারি হাদিস  ৫১০২, ৮৮, ৫০৯৯, ৩৫০৮ ও ৪৩২৬; মুসলিম ৪৫, ৬২ ও ৬৩, ১৪৫৫, ১৪৪৪; সুরা আহযাব আয়াত ৪ ও ৪০; সূরা নিসা-২২-২৩; সূরা নূর, আয়াত ৩১; ইবন মাজাহ ১৯৫১; তিরমিযী ১১২৯

[4] সূরা আহযাব আয়াত ৫; তাফসীরে ইবনে কাসির ১৫/৭৩৮

[5] তারিখে তাবারী/অধ্যায় ৩৯

[6] সূরা আহযাব আয়াত ৪-৫,৩৭-৪০; তাফসিরে ইবনে কাসির ৬/৩৩৭; বুখারি ২৬৪৫, ৪৩২৬; সহিহ মুসলিম ৬২-৬৩; আবু দাউদ ১৯৪০; আহকামুল কোরআন ৩/২৯২; তাকমিলাতু ফাতহিল কাদির ১০/১২২; তুহফাতুল ফুকাহা ২/১২৩

[7] তারিখে তাবারী, ৩৯/১৮০

[8] িসিরাতে মস্তফা, মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলবি (রহ), পৃষ্ঠা-৭২৮

[9] সুরা আহযাব, আয়াত ৩৭

[10] সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৯১৫

Ashraful Nafiz

I am an ordinary Muslim student who is interested in acquiring the beneficial knowledge given by Allah and hopes to spread that knowledge among the people. facebook youtube twitter instagram quora

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Would you tell me something

নবীনতর পূর্বতন