ফেসবুকে কোন একজন একটা নিউজ প্রচার করে যে ‘ওমুক দেশে ৫জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে একটা পশুকে ধর্ষনের’ সেখানে নিশা ডকোসটা নামের এক মেয়ে ইসলাম বিদ্বেষী কমেন্ট করে তারপর আমি তাকে রিপলাই দিই। (নাম পরিবর্তীত- আমি ওমর ও পোষ্ট দাতা ইসমাইল,পরে আসা ব্যাক্তি বাবলু)
ইসমাইল: ভুল আইডিয়া আপু।
নাফিজ: কোথায় পেয়েছেন হিজাব বা পর্দা করলে ধর্ষণের শিকার হয় না? কোরআন হাদিসের কোথাও আছে? বরং আইন যদি ইসলামিক আইন হত ও আইন প্রয়োগ যদি সঠিক হত তাহলে ধর্ষণের পরিমান অনেক কম হত। (নিশা ডকোসটাকে)
নিশা ডকোসটা : মুমিনেরা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করেন। পৃথিবীতে যে সমস্ত দেশে ইসলামের কাহিনী আছে সেখানেও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন মানুষ। একটি পরিপূর্ণ ইসলামিক দেশে সেখানে একজন ধর্ষিতা নারী নির্যাতনের শিকার সে আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার পাওয়ার অধিকার রাখে না।
(তারপর একটা লিংক দেন উনি।) (নাফিজকে)
ইসমাইল: আপু মুমিনদের কোন উক্তি রেফারেন্স নয়। যদি না কুরআন হাদিসে এই বিষয়টি প্রমাণিকভাবে প্রমাণিত না হয় আপু। তবে পোষাক নারী সৌন্দর্যকে রক্ষা করে আপু। (নিশা ডকোসটা একবারও ইসমাইলকে রিপলাই করেনি)
নাফিজ: মুমিনেরা ধর্ষণের জন্য শুধু পোশাককে দায়ী করে না। মুমিন কাকে বলে আপনি সেটাও যানেন না। প্রকৃত মুমিনেরা ধর্ষণের জন্য দায়ী করে বিকৃত মস্তিষ্ক, বিচারহীনতা, ক্ষমতার প্রভাব, খারাপ মানষিকতা, সর্বশেষে পোষাক। এছাড়া ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বিক্ষ্যাত অমুসলিম দেশগুলোই অবস্থান করছে। আপনার শেষ অংশ সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন পরিপূর্ণ ইসলামিক দেশ একটাও নেই। আর আপনি নাকি সব ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন তারপরেও জানেন না যে কোরআনে কি আছে। মহান আল্লাহ বলেছেন ‘‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্ৰত্যেককে একশত বেত্ৰাঘাত করবে’’(সূরা আন-নূর আয়াত ২) তারপর এটাও বলেছেন ‘আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।’ (সূরা আন-নূর আয়াত ৪) (নিশা ডকোসটাকে)
নিশা ডকোসটা: প্রথমত আপনাকে বলি ধর্ষণ শব্দটি কুরআনে উল্লেখ নেই। পরিপূর্ণ ইসলামী দেশগুলোতে ধর্ষিতাকে ধর্ষণের কারণ উল্লেখ করতে হয়। ধর্ষিতাকে চারজন পুরুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য করতে হবে, ধর্ষিতা যদি চারজন পুরুষ সাক্ষীর যোগাড় করতে না পারেন তাহলে তিনি ব্যভিচারের শাস্তি পাবেন। যা একটি নারীর পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। যে কারণে ইসলামিক দেশগুলোতে অসংখ্য ধর্ষণের বিচার সামনে আসে না। (নাফিজকে)
নাফিজ: আহারে জ্ঞানী আপু ধর্ষিতাকে নিজের সাথে অপরাদ হওয়ার প্রমান হিসেবে চারজন পুরুষ সাক্ষীর দরকার সেটা কোরআন হাদিসে কোথাও নেই। আর বর্তমানে মেয়েকি ব্যভিচারি নাকি ধর্ষণের স্বীকার সেটা বের করার অনেক পদ্ধতি আছে। এছাড়া আমি আবারো বলছি পৃথিবীতে পরিপূর্ণ ইসলামী দেশ নেই। ইসলামে ধর্ষনের শাস্তি নেই এটা মনে করবেন না এগুলা পড়েন দয়া করে। ধর্ষনের শাস্তি নিয়ে ৪/৫টা হাদিস আছে নিছে শুধু ২টা উল্লেখ করলাম
(১)সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ‘উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ‘উমার (রা) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী (রহ) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল, বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জরিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ‘হদ’(কুরআন-হাদিসে বহু অপরাধের ওপর শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কুরআন-হাদিসে সুনির্ধারিত তাকে হদ বলে) জারি হবে। (সহিহ বোখারি: ৬৯৪৯)
(২) হজরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হদের শাস্তি দেন। ’ (ইবনে মাজাহ: ২৫৯৮, এই হাদিস দুর্বল কিন্তু এই হাদিসের সাথে সহিহ বোখারির ৬৯৪৯ হাদিস মিল তাই অনেকে এটাকে সহিহ মনে করে) (নিশা ডকোসটাকে)
বাবলু: ইসলামি আইনে ধর্ষিত অই ছাগলটিরো হত্যার বিধান কেনো একটু যদি ব্যাখ্যা করেন। (নাফিজকে)
ইসমাইল: অত্র ইবারতে হত্য উদ্দেশ্য নয়। বরং গর্হিত কাজের জন্য সতর্কমুলক ধমকি উদ্দেশ্য। (এই উত্তর শুনে বাবলু একটু রাগান্বিত হলেন)
নাফিজ: ভাই আপনি যে হাদিসের কথা বলছেন সেটা তিরমিজি, আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ ও আরো কয়েকটা হাদিস গ্রন্থে আছে। কিন্তু তিরমিজি ও আবু দাউদের সেই হাদিস হাসান এবং এই হাদিসের বিরুদ্ধে হাদিস আছে আবার অনেকে বলেছেন যে হাদিসগুলো দুর্বল কারন ইবন আব্বাস (রা) ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে এই হাদিস পাওয়া যায় না। তারপর বাকি যে গ্রন্থগুলোতে ধর্ষিতপশুকে হত্যার হাদিস আছে সেগুলা সব যয়িফ অর্থাৎ দুর্বল হাদিস যা অগ্রহন যোগ্য। (বাবলুকে)
নিশা ডকোসটা ও তার মতরা কেউ আর কোন প্রশ্ন বা রিপলাই করেনি। হয়ত এই সম্পর্কে তাদের আর ইসলাম বিদ্বেষী ছড়ানোর মত কিছু জানা নেই। তাই রিপলাই দেয় নি।
ইসলামে যেমন ব্যভিচার বা জেনার শাস্তি রয়েছে, তেমনি জেনার সমগোত্রীয় ধর্ষণেরও কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে ইসলাম। তবে ব্যভিচার সংঘটিত হয় উভয়ের সম্মতিতে, তাই ব্যভিচারের ক্ষেত্রে উভয়েরই শাস্তি রয়েছে। কিন্তু ধর্ষিতা এখানে জুলুমের শিকার, তথা মাজলুম বা অত্যাচারিত আর ইসলামে মাজলুমের কোনো শাস্তি নেই। ধর্ষক ও ধর্ষীতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এটা পড়ে দেখতে পারে - [ইসলামে ব্যভিচার ও ধর্ষন সম্পর্কিত সবকিছুর বিধান]
একটা কথা মনে রাখবেন গালাগালি করে বা উলটাপালটা কথা বলে এসব মানুষদেরকে কাবু করা সম্ভব না। এদের মত মানুষকে জব্দ করতে হলে কোরআন-হাদিসের জ্ঞান, বিজ্ঞানের জ্ঞান, সামাজিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য দেশ সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখতে হবে। বিশেষ করে উপস্থিত বুদ্ধি ও খন্ডন করা কঠিন এমন যুক্তি দিতে হবে। আগ থেকে নাস্তিকদের বা ইসলামবিদ্ধেষীদের পশ্নগুলো সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখতে হবে। আল্লাহ যদি চায় ইনশাআল্লাহ আপনিও এদের সাথে ডিবেটে পারবেন।